রোববার, ১২ মে ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

ভারতে মাটির নিচের বিস্ময়

ডেস্ক রিপোর্ট
২৪ জানুয়ারি ২০২২

ডাইনোসরের ডিমের বিস্তৃত বিছানা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের জন্য নতুন অদ্ভুত প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীসহ ভারতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনীয় কিছু জীবাশ্ম। তবে তার অনেকটাই পড়ে আছে মাটির নিচে। ২০০০ সালে পশ্চিম ভারতের নাগপুরের সেন্ট্রাল মিউজিয়াম পরিদর্শন করার সময় জীবাশ্মবিদ জেফ্রে এ উইলসন সবচেয়ে আকর্ষণীয় জীবাশ্মের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন। তিনি জীবনে এমনটা আর কখনও দেখেননি। তার একজন সহকর্মী ভারতের পশ্চিম উপকূলে গুজরাটের ধোলি ডুংরি গ্রামে ১৯৮৪ সালে নমুনাটি খনন করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উইলসন বলেন, প্রথমবারের মতো একটি শিশু ডাইনোসরের হাড় এবং তার ডিম একই নমুনায় একসঙ্গে পাওয়া গেছে। কিন্তু তার বিস্ময় সেখানে আরও কিছু ছিল। এই নমুনাটিতে তিনি যে হাড়গুলো পরীক্ষা করেন তাতে একটি বিশেষ সংযোগের সঙ্গে দুটি ছোট কশেরুকা ছিল। যা কেবল সাপেরই ছিল। উইলসন যে এটির ভুল ব্যাখ্যা করেননি তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি মেরুদণ্ডের সঙ্গে একই প্যাটার্নের সন্ধান করেছিলেন। তিনি যথেষ্ট নিশ্চিত হন যে, এটি খুঁজে পেয়েছেন। এটা মনে হচ্ছিল তার মাথার মধ্যে একটি আলোর বাল্ব নিভে গেছে। এই জীবাশ্মটিতেও কি প্রাক-ঐতিহাসিক সাপ থাকতে পারে?

ভারতে এমন কোনো সুবিধা ছিল না যা ওই জীবাশ্মকে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে পারে। নমুনাটি যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার জন্য ভারতে ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষার তত্ত্বাবধানকারী সরকারি সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই) থেকে অনুমোদন পেতে উইলসনের চার বছর লেগেছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে এর নরম এবং সূক্ষ্ণ হাড়ের চারপাশের পাথুরে বস্তু অপসারণ করতে পুরো এক বছর লেগেছিল।

পরবর্তী বছরগুলোতে বিজ্ঞানী, জীবাশ্মবিদ এবং সাপ বিশেষজ্ঞরা জীবাশ্মটি নিয়ে গবেষণা করেন। ২০১৩ সালে ভারতীয় জীবাশ্মবিদ ধনঞ্জয় মোহাবে এবং জিএসআইর অন্যদের সঙ্গে উইলসন জীবাশ্মটি অবিশ্বাস্য বিষয় বর্ণনা করে একটি গবেষণাপত্র লেখেন। এতে তারা কেবল একটি প্রাগৈতিহাসিক সাপের উপস্থিতির কথাই নিশ্চিত করেননি, এটিও দেখতে পেয়েছেন যে এর চোয়ালগুলো এমনভাবে খোলা ছিল যেন তা বাচ্চা ডাইনোসর খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। সেটি ডাইনোসরের ডিমের একটি ছোপের পাশে এবং তা এখনও সম্পূর্ণ ছিল। প্রকল্পটির ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় অনুমান করা হয়, প্রাণীগুলো সম্ভবত ভূমিধসে চাপা পড়েছিল। ঘটনটি কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই দ্রুত ঘটেছিল।

এভাবেই 'সানাজেহ ইন্ডিকাস' বিশ্বব্যাপী আত্মপ্রকাশ করে। এ শব্দ দুটি সংস্কৃত। এর অর্থ সিন্ধু থেকে প্রাচীন ফাঁক। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন প্রাক-ঐতিহাসিককালে বড় শিকারকে গিলে ফেলার মতো যথেষ্ট প্রশস্ত চোয়াল খোলার ক্ষমতা সাপের ছিল না। কিছু বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আধুনিক সাপ এমন ক্ষমতা অর্জন করেছে। এভাবে, জীবাশ্ম একটি প্রাচীন অতীতের রহস্য উন্মোচন করতে পারে যা অন্যভাবে আমাদের কাছে গোপনীয়ই থেকে যায়।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ডী জীবাশ্মবিদ এবং ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের প্যালিওবায়োলজি বিভাগের গবেষণা সহযোগী অদ্বৈত এম জুকার বলেন, 'আমি মনে করি ভারতের জীবাশ্ম ঐতিহ্য অনেকাংশে অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অনেকেই এটা ভুলতে বসেছে।'

ভারতীয় জীবাশ্মের গবেষণাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন আরেকটি বিষয় হলো বিজ্ঞানীদের মধ্যে বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাব। উইলসন বলেছেন, ভারতীয় জীবাশ্মবিদ্যা বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান থাকতে পারে না।

কারণ ভারত তার জীবাশ্ম সম্পদের দিক থেকে পাকিস্তান, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। এ দেশগুলো একটি ভূতাত্ত্বিক একক। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ি বিজ্ঞানীদের জন্য অবাধে ভ্রমণ এবং তথ্য বিনিময় করা কঠিন করে তুলতে পারে। সূত্র: বিবিসি।

নতুন নিয়মে ভ্রমণে যাওয়ার টিপস
একাধিক পদে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড

আপনার মতামত লিখুন