রংতুলির আঁচড়ে পাথরে প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি

জাফলংয়ে পাথর খোদাই করে লিখছেন এক শিল্পী
ভালোবেসে নাকি পাথরেও ফুল ফোটানো যায়- কথাটা আসলেই কতটা সত্য ঠিক জানা নেই। তবে শিল্পীর সুনিপুণ শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় আর রংতুলির আঁচড়ে পাথরে ফুটিয়ে তোলা যায় প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি। এমনই বেশ কয়েকজন দক্ষ কারিগর রয়েছেন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সিলেটের জাফলংয়ে। পাথর কেটে তার মাঝে খোদাই করে এরপর রংতুলির আঁচড়ে বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি ও প্রাকৃতিক দৃশ্যপট ফুটিয়ে তুলছেন তারা। এ ছাড়া পাথরের মাঝে নকশা করে জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী ও বিভিন্ন উৎসবের দিন তারিখও লিখে থাকেন তারা। আর এগুলোর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পর্যটকদের অনেকেই প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জাফলং যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, তেমনি এখানে রয়েছে খনিজসম্পদ পাথরের ভান্ডার। সেই পাথর কেটে শিল পাটা তৈরির পাশাপাশি কিছু কারিগর পাথর খোদাই করে এতে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলছেন।
পাথরে চিত্রকর্ম আঁকাই তাদের জীবিকা। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই এসব শিল্পীর। জীবিকার তাড়নাই তদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে সূক্ষ্ণ, নান্দনিক এসব কাজ।
সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় কথা হয় আঁকিয়ে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে। জানালেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ পেশায় রয়েছেন তিনি। প্রায় দুই বছর ধরে করোনার প্রভাবে পর্যটক ভ্রমণে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। এখন আর আগের মতো পর্যটকের সমাগম হয় না।
বিজিবি ক্যাম্প এলাকার খানিকটা দূরে জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায় পাথরের চিত্রকর্মের পসরা সাজিয়ে বসে ছিলেন নেছার উদ্দিন নামে আরেক যুবক। তিনি বলেন, একেকটা চিত্রকর্ম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। এতে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন হয় তার। সহজ ঋণ, সরকারি সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। প্রশিক্ষণ পেলে পাথর দিয়ে নানা রকম শোপিসও তৈরি করা যাবে। তখন অনেক বেকার যুবক এই পেশায় সম্পৃক্ত হবেন। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, পাথর খোদাই করে তার মাঝে বিভিন্ন চিত্রকর্ম আঁকা সত্যিই সুন্দর একটি শিল্প। এ শিল্পকে ধরে রাখতে বা যারা এ পেশায় রয়েছেন তাদের আরও দক্ষ করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে চারুকলার কয়েকজন ভাস্করের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সম্ভবত আগামী মাসেই প্রশিক্ষণ দিতে গোয়াইনঘাটে আসবেন। আর জাফলংয়ে যারা এ পেশায় রয়েছেন, তারা যদি কেউ ঋণ নিতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে আমি উপজেলার ব্যাংকগুলোকে বলে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেব।
সিলেট
আপনার মতামত লিখুন