বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

করোনায় বিপর্যস্ত পর্যটন খাত : আমাদের করণীয়

কাজী রহিম শাহরিয়ার
১৮ জুন ২০২০

করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বের পর্যটন খাত। আমাদের দেশেও এ খাত গভীর সংকটে পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কত দিন লাগবে তারও নিশ্চয়তা নেই। সেটা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দিলেও পর্যটকরা ভ্রমণে বের হবেন না- এটাই স্বাভাবিক। 

করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পরিবর্তন আসবে এভিয়েশন খাতেও। এক্ষেত্রে বিমান ভাড়া বেড়ে যাবে বহু গুণ। পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক অনেক বিধি-নিষেধও মেনে চলতে হবে যাত্রীদের আর এই বিধি-নিষেধগুলো কার্যকর করতে হবে এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে। এমতাবস্থায় মধ্যবিত্ত বেশিরভাগ পর্যটক- যারা বিদেশে ভ্রমণে যেতেন, এসব কারণে তারাও করোনা পরবর্তী সময়ে বিদেশে যাবেন না। বিদেশের ঝক্কি না নিয়ে নিজ দেশে ভ্রমণেই স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন তারা। এতে আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পে যে  ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। 

দেশের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে সরকারি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ কিছু পর্যটন স্পটে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে, তখনই পর্যটকরা ভ্রমণে বের হবেন। 

এ বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন পর্যটনখাত সংশ্লিষ্টরা। কারণ, পুরো শীতকালীন মৌসুমটা পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে পর্যটন খাতে প্রাণ সঞ্চার করার চেষ্টা যেমন থাকবে, তেমনি এ খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাবেন পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

আমি আশা করি, আগামী অক্টোবর নাগাদ পর্যটন খাত কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে। করোনা কমে গেলে শীত মৌসুমে পর্যটকরা ভ্রমণে বের হবেন। ফলে এ খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। করোনার কারণে এ খাতের যেসব কর্মী চাকরি হারিয়েছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারাও আবার কাজে ফিরতে পারবেন। 

করোনা পরবর্তী সময়ে ডমেস্টিক ট্যুরিজম বা অভ্যন্তরীণ পর্যটনের অনেকটা উন্নতি হবে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যটনে খরচ বেড়ে যাবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ পর্যটন ঘুরে দাঁড়াবে।  

করোনা পরবর্তী পর্যটন কেমন হবে- এ বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের। অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম র্বোড হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ। পাশাপাশি পর্যটন  মন্ত্রণালয় হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পর্যটকদের জন্য একটি গাইলাইনও তৈরি করছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পর্যটক উভয়কেই সেই গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।  তবে সবই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।

এ খন প্রশ্ন হচ্ছে, করোনায় এ খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণ ঘটবে কি করে? বিশেষ করে বেসরকারি খাতের যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য ১০টি পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। যেমন-

এক : সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে- যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা যায়।

দুই : বেসরকারি পর্যায়ে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের যাবতীয় ইউটিলিটি বিল কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য মওকুফ করতে হবে। 

তিন : এ খাত সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্যালারি ট্যাক্স বা বেতন কর এক বছরের জন্য মওকুফ করতে হবে। 

চার : এ খাত সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি এক বছরের জন্য বন্ধ করতে হবে এবং সুদমুক্ত সিসি ঋণ প্রদান করতে হবে।

পাঁচ :  এ খাত সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনে কল্যাণধর্মী বিশেষ স্কিম চালু করতে হবে। 

ছয় :  করোনাকালীন সময়ের জন্য এ খাত সংশ্লিষ্টদের এআইটি, ভ্যাট বা আয়কর মওকুফ করতে হবে।

সাত : ট্যুর গাইড, স্ট্রিট ফুড ভেন্ডর, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মালিক এবং হোম স্টে পরিবারসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সহায়তার জন্য গ্রোথ ফান্ড গঠন করতে হবে।

আট : এ খাত সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পর্যটকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

নয় :  করোনাকালীন সময়ের এ খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান,  কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পর্যটকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে ট্যুরিজম বোর্ডকে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

দশ :  এ খাত সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা ও মিডিয়াকর্মীদের আর্থিক ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 

উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করলেই এ খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। তাহলে এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন সহজ হতে পারে। 

আশা করি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের পথ অনুসরণ করে করোনায় এ খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

লেখক : প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ট্যুরিজম এ্যান্ড এভিয়েশন মিডিয়া ফোরাম; প্রযোজক (অনুষ্ঠান), মাই টিভি

সুন্দরবন উপকূলে ফিরে আসুক প্রাণচাঞ্চল্য
সোনারগাঁয়ের কারুশিল্পীদের মাঝে সুবর্ণগ্রামের স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ

আপনার মতামত লিখুন