ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় মৌলভীবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা

‘আমার দুই কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যাংক লোন রয়েছে। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে রিসোর্ট বন্ধ। প্রথম দিকে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারলেও শেষের দিকে আর পারিনি। একে তো রিসোর্ট বন্ধ, তার ওপর বন্ধ রিসোর্টের বিদ্যুৎ বিল এসেছে দেড় লাখ টাকা। আমি তাদেরকে চিঠি দিয়ে বলেছি এক সঙ্গে এতো টাকা দিতে পারব না, কিস্তির সুবিধা দিতে হবে। সব দিক দিয়ে আর্থিক চাপে থাকায় ঈদের আগে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর রিসোর্ট সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু না করলে আমি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ব জানিয়ে আবেদন করি। ঈদের পর থেকে রিসোর্ট চালু করেছি। কিছু কিছু অতিথি আসছেন। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের পরিচালক সজল দাস।
সজল দাসের মত দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সীমিত আকারে রিসোর্ট– হোটেল চালু করেছেন মৌলভীবাজারের অনেক ব্যবসায়ী। তবে এই ক্ষেত্রে প্রশাসন যেমন খোলার জন্য কোনো নির্দেশ দিচ্ছে না আবার বাধাও দিচ্ছে না।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, পর্যটন বোর্ডের কিছু নির্দেশনা আছে। এইসব আমরা বাস্তবায়ন করব, যখন সব স্বাভাবিক হিসেবে ঘোষণা আসবে তখনই আমরা স্বাভাবিক হিসেবে ঘোষণা দেবো। বর্তমানে আমরা কাউকে যেমন বাধা দিচ্ছি না আবার উৎসাহও দিচ্ছি না। তবে যারা চালু করেছেন তাদেরকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় , টানা চারমাসেরও বেশি সময়ে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি ও সাড়ে ৩ হাজার মানুষ কর্মহীন থাকার পর অবশেষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে মৌলভীবাজারের ১৫০টি হোটেল-রিসোর্ট। ঈদের পর থেকে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগুনা। তবে এখনও খুলে দেয়া হয়নি জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাধবকুন্ড জলপ্রপাত।
তবে ঈদের দিন থেকেই পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে দেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকিতে। চালু হয়েছে ৫ তারকা হোটেল দোসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা এবং গ্র্যান্ড সুলতান হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। তবে হোটেল-রিসোর্টের বড় একটি অংশ সরকারের পরিষ্কার নির্দেশনা না থাকায় এখনও খোলেনি। ব্যবসায়ীরা স্বাস্থবিধি মেনে সীমিত আকারে চালু করেছেন জানালেও পর্যটকরা বলছেন স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। টানা চারমাস অলস সময় কাটানোর পর পর্যটন সংশ্লিষ্ট তিন হাজার মানুষের একটি অংশ কাজে ফিরেছেন।
পর্যটন সেবা সংস্থা শ্রীমঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বলেন, মৌলভীবাজারে প্রায় ১৫০টি হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। তার মধ্য শ্রীমঙ্গলেই প্রায় ৭০টি। করোনার কারণে শুরুতেই সরকারের নির্দেশনায় ১৮ মার্চ থেকে লাউয়াছড়াসহ জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ছিল। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। তাই আমরা সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি পালনে কড়াকড়ি আরোপ করেই আমাদের হোটেল-রিসোর্ট চালু করেছি। আমরা কাউকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, বিগত চার মাস ধরে পর্যটন বন্ধ থাকায় আমরা কোনো বুকিং পাইনি। চার মাসের প্রতি মাসেই আমাদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন আশা করছি কিছু বুকিং আমরা পাবো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরব।
গ্রিনলিফ রিসোর্টের পরিচালক এস কে দাস বলেন, প্রতি মাসে গড়ে দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে আমার। ঈদের পর থেকে রিসোর্ট চালু করেছি । স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা আসছেন, তবে তা সংখ্যয় খুব কম। যেহেতু অন্যান্য জেলায় পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে আমাদেরও বেলায় একই কাজ করলে পর্যটকরা জানতে পারতেন কবে খুলবে। এতে তারা নিশ্চিন্তে আসতে পারতেন। পর্যটন এরিয়াগুলো থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক। বিদ্যুৎ বিল এবং স্টাফদের বেতন তুলতে পারলেও আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর পথ পাব।
জেলার দুইটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। এ দুটি এলাকা বন বিভাগের অধীনে। বন বিভাগ বলছে- মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত না আসলে চালু করা যাবে না।
বন বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে বন বিভাগের টুরিস্ট স্পটগুলো অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এদিকে সীমিত আকারে পর্যটন চালু হওয়ায় স্বস্তিতে আছেন ট্যুর গাইডরা। শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাপস দাশ বলেন, আমাদের অনেকেই এই কয়েক মাস খেয়ে না খেয়ে কাটিয়েছেন। কারণ আমাদের সংগঠনের সবাই পেশাদার। বর্তমানে সীমিত আকারে পর্যটন চালু হওয়ায় আমাদের মাঝে স্বস্তি কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন