শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

শীতকালে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০টি স্থান

অনলাইন ডেস্ক
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ, ছোটবেলা থেকে নিজ দেশ সম্পর্কে আমরা এভাবেই জেনে বড় হয়েছি। বালুময় মরুভূমি আর বরফ ছাড়া প্রকৃতির প্রায় সব রকম সৌন্দর্য নিয়ে সবুজের ঘাগরা গায়ে দিয়ে সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সুন্দর জায়গাগুলো ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সাজে আমাদের হাতছানি দেয়। সেই ডাককে অগ্রাহ্য করা প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে শীতকালের মতো ছুটির মৌসুমে ঘরের ওম ছেড়ে দেশের পর্যটন আকর্ষণ গুলোকে পরিবার-বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুঁয়ে দেখতে মন চায়। তাই চলুন জেনে নেই শীতকালে বেড়ানোর দশটি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে।

১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

বাংলাদেশের বিশ্ব দরবারে পরিচয়ের এক অন্যতম পরিবাহক হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। শীতকালে সমুদ্রের পাড়ে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় দেখা যায়। এখানে সামুদ্রিক আবহাওয়ার জন্য ঠান্ডার প্রকোপ তুলনামূলক কম থাকে। আর সাগরের ঢেউয়ের বিশালতায় হারিয়ে যেতে চাইলে শীতকালে কক্সবাজার বেড়াতে আসার জুড়ি নেই। এছাড়া মেরিন ড্রাইভের সুবিশাল রাস্তা কক্সবাজারে যোগ করেছে ভ্রমনের বাড়তি আকর্ষণ। লাবনী ও সুগন্ধা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের রাস্তা ধরে টেকনাফের দিকে আগালে দেখা পাওয়া যাবে হিমছড়ি, ইনানি, শামলাপুর ও হাজামপাড়ার। সিএনজি কিংবা লোকাল গাড়ি ভাড়া করে কক্সবাজারের পাশের থানা রামুতে গেলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সুন্দর কিছু প্যাগোডা বা মন্দির দেখতে পাওয়া যায়।

২. সেন্টমার্টিন দ্বীপ

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন শীতকালে ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। স্থানীয়ভাবে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত এই দ্বীপের পরিবহন ব্যবস্থা ও সমুদ্রপথ শীতকালে ভ্রমণ অনুকূলে থাকে বলে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ এখানে ছুটে আসে। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের কোলে সেন্টমার্টিনের অবস্থান। মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটিতে যেন নীল রঙের নতুন এক সংজ্ঞা জানা যায়। সৈকতের কোল ঘেঁষে সারি সারি নারিকেলের গাছ, নীল আকাশের দিগন্তে নীল জলরাশির মিশেল আর প্রবাল পাথরের অপরূপ দৃশ্য বাংলাদেশের অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না। পুরো দ্বীপটি বৈচিত্র্যতার খনি। জেলেপাড়া, শুটকিপাড়া ও এলাকার নানা দিনযাপনের কাজ পর্যবেক্ষণ ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করে।

৩. সাজেক ভ্যালি

বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানের নাম সাজেক ভ্যালি। রাঙ্গামাটির ছাদ খ্যাত সাজেক ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সাজেক এমনই আশ্চর্য্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্যে আপনি হতে পারেন চমৎকৃত। কখনো বা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হটাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা।

৪. কুয়াকাটা

পাহাড়, বন ঘুরে যদি মন সাগরের পানে ছুটে যেতে চায় তবে সাগরকন্যা কুয়াকাটা আছে আপনার অপেক্ষায়। কুয়াকাটা এমন এক বিশেষ স্থান যার একই জায়গা হতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়। এছাড়া শুটকি পল্লী, ফাতরার বন, গঙ্গামতির জংগল ও লাল কাঁকড়ার দ্বীপ কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষণ। পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দিগন্তজোড়া সুনীল আকাশ এবং ম্যানগ্রুভ বন কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। প্রায় সারা বছর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। সৈকতে চাইলে মটর সাইকেল ও ঘোড়া ভাড়া করতে পারেন।

৫. শ্রীমঙ্গল

শীতকালে সিলেটের পানিবেষ্টিত স্থানগুলো তেমন আকর্ষণীয় মনে না হলেও চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল কিন্তু শীতকালে ভ্রমণের জন্য দারুণ এক জায়গা। চা বাগানের বাংলোতে বসে চা গাছে ঘিরে থাকা পরিবেশে শীতের হিম হাওয়া মেখে গরম চায়ের পেয়ালা হাতে বসে থাকা অদ্ভুত রোমাঞ্চের জন্ম দেয়। বনপ্রেমিদেরও হতাস হওয়ার কারণ নেই। বাইক্কা বিলের পাখির অভয়াশ্রম কিংবা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে জীববৈচিত্র দেখতে দেখতে কখন যে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না।

৬. বান্দরবান

মেঘ ছোঁয়ার কথা মনে আসতেই যে স্থানটির কথা মাথায় আসে তা হলো বান্দরবান। শীতকালে পার্বত্য জেলা বান্দরবান ঘুরবার অন্যরকম আবেদন দেখা যায়। সাঙ্গু নদীর পাশে গড়ে ওঠা পাহাড়ের সারি নিয়ে বান্দরবান মেঘকে মাথায় নিয়ে পর্যটকদের হাতছানি দেয়। আদিবাসী বোমাং রাজার বাড়ি থেকে শুরু করে জাদির পাহাড়ের চূড়ার স্বর্ণ মন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু আর ছোট চিড়িয়াখানা, চিম্বুক পাহাড়, শৈল প্রপাত, আদিবাসীদ গ্রাম, ভ্রাম্যমাণ বাজার ইত্যাদি সমস্ত কিছু বান্দরবানকে ভ্রমণের দিক থেকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি বাংলাদেশের সকল স্থান থেকে করেছে অনন্য।

৭. রাঙ্গামাটি

‘রাঙ্গামাটির পথে লো, মাদল বাজে – বাজে বাঁশের বাঁশি’। মাদল আর বাঁশির সুরে ঘেরা রাঙামাটি বাংলাদেশের উপজাতিদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানান দিতে নিজ বুকে দাঁড় করিয়েছে উপজাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের কাছেই আছে চাকমা রাজার বাড়ি ও বৌদ্ধদের তীর্থস্থান রাজবন বিহার। তবে রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে ঝুলন্ত সেতু। সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু দেখবার জন্য অসংখ্য মানুষ এখানে প্রতি বছর বেড়াতে আসেন। কাপ্তাই হ্রদের তীরে রিজার্ভ বাজার ও তবলাছড়ি বাজার নামে জনবহুল দুটি লোকাল বাজার দেখা যায়। এখান থেকেই নৌকায় করে শুভলং বাজারের দিকে গেলে শুভলং ঝর্নার দেখা মিলে। শীতকালে এই ঝর্না মনোরম পর্যায়ে না থাকলেও যাত্রা পথে পাহাড়ি আদিবাসী খাবারের স্বাদ নেবার জন্য নামকরা কিছু রেস্তোরা পাবেন।

৮. সুন্দরবন

শুধু পাহাড় কিংবা সমুদ্র নয়, শীতকালে ঘুরবার জন্য বনভূমিও আলাদাভাবে সৌন্দর্যপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। ইউনেস্কো কতৃক বিশ্ব ঐতিহ্যে জায়গা করে নেওয়া প্রায় ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি ওয়াইল্ড লাইফ প্রেমীদের কাছে যেন এক স্বর্গের নাম। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, কুমির, বানর সহ নানা বৈচিত্র্যময় প্রানীকুলের দেখা মিলে। ৩৩০ প্রজাতির ছোট বড় গাছের সাম্রাজ্য এই সুন্দরবনে কটকা, কচিখালী, হিরনপয়েন্ট, কোকিলমণি, দুবলার চর, পুটনি দ্বীপ ও মান্দার বাড়িয়াসহ নানান দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। লঞ্চে করে গহীন বনে ভ্রমণ, গা ছমছমে এলাকায় বাঘের খোঁজে ভয়ে ভয়ে মাটিতে পা রাখা নিশ্চিতভাবে আপনার ভ্রমণে বাড়তি অ্যাডভেঞ্চারের যোগান দিবে।

৯. বাগেরহাট

সুন্দরবন দেখতে গেলে বাগেরহাট জেলাকে ভ্রমণ পরিকল্পনায় যুক্ত করে নেয়া যায়। বাগেরহাটে অবস্থিত প্রাচীন মসজিদের মধ্যে আছে ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, জিন্দাপীর মসজিদ, সিংরা মসজিদ, রণবিজয়পুর মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ এবং হজরত খান জাহান আলীর সমাধিসৌধ। প্রাচীন ইতিহাসের পাশাপাশি এসব মসজিদের নির্মাণশৈলী মনকে অভিভূত করে।

১০. কুতুবদিয়া দ্বীপ

বিদেশি পোস্টকার্ডে বাতিঘরের ছবি দেখে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে কক্সবাজার জেলার ছোট উপজেলা কুতুবদিয়ায় গেলে প্রাচীন একটি বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাবেন। দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত এই লাইট হাউসটি সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে দেখাতে নিজেই কবে পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে তা জানা যায়নি। এখনো ভাটার সময় পানি নেমে গেলে বাতিঘরের অবশিষ্ট জেগে উঠে যেন পুরনো ইতিহাসের গল্প বলে যায়। ২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট এই দ্বীপে প্রাচীন বাতিঘর ছাড়াও রয়েছে একান্ত সময় কাটানোর জন্য নির্জন সমুদ্র সৈকত, বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের স্থান এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার। দ্বীপটিতে পৌঁছাতে হলে চকোরিয়ার মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়। ঝাউগাছের ঘেরা দ্বীপের সৈকত এলাকা নীরবতা প্রিয় পর্যটকদের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয়।

শীতে বেড়ানোর আরও কিছু জায়গা: উপরের জায়গা গুলো ছাড়াও শীতকালে বেড়ানোর উপযুক্ত জায়গা গুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন চর ও দ্বীপ অঞ্চল যেমন; মনপুরা দ্বীপ ও নিঝুম দ্বীপ। শীতকালেই অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই দেশে তাই শীতকালে যেতে পারেন হাওর অঞ্চলে যেমন; টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর ইত্যাদি। এছাড়া শীতের আমেজ পেতে প্রকৃতির খুব কাছ থেকে পেতে বেড়িয়ে আসতে পারেন মৌলভীবাজার বা গাজীপুরের মত জায়গার ইকো রিসোর্ট গুলো থেকে।

এই শীতে কোন জায়গায় আপনি ভ্রমণে যেতে চান? আপনার পছন্দের গন্তব্যে যাওয়ার বিস্তারিত সকল তথ্য রয়েছে ভ্রমণ গাইডের তথ্য ভাণ্ডারে। সেই সাথে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আপনার ভ্রমণের জন্য রইলো নিরন্তর শুভ কামনা।

ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গাজীপুর আকর্ষণীয়
মোটরসাইকেলে ভারত-পাকিস্তান ভ্রমণে বাংলাদেশি তিন তরুণ

আপনার মতামত লিখুন