শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

পদ্মা সেতুতে পর্যটন শিল্পের পথ প্রসারিত হলো

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ ডিসেম্বর ২০২০

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণাধীন অবকাঠামো হলো পদ্মা সেতু। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর ৪১ তম স্প্যানটি বসানোর পর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুটির মূল কাঠামো পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে।

বিশ্বের গভীরতম পাইলের এই সেতুটিতে যানচলাচল পুরোপুরি চালু হলে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বাড়বে বিনিয়োগ, গড়ে উঠবে বহু ছোট-বড় শিল্পায়ন-কল-কারখানা ও কর্মসংস্থান। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হোটেল-মোটেলসহ অবকাঠামো উন্নয়ন। এতে করে আসবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি। পাশাপাশি এখানকার পর্যটন কেন্দ্রেগুলোতে বাড়বে পর্যটক সমাগম আর ব্যাপক সম্ভাবনা।

পর্যটন করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগজুড়ে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্র বন্দর, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর, বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন পল্লী, সীমা বৌদ্ধ বিহার, পানি যাদুঘর, বরিশালের দূর্গাসাগর, সাতলার লাল শাপলার বিল, গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ, ঝালকাঠীর ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট ছৈলার চর, ভোলার মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরি মুকরি, জ্যাকব টাওয়ার, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী পেয়ার বাগান, আটঘর আমড়া বাগান, কবি আহসান হাবীবের বাড়ি, বরগুনায় ফাতরার বন, সোনারচর, হরিণঘাটা, লালদিয়ার বনসহ আরো অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।

এসব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও তুলনামূলক দেশ-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় নেই। তবে পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হলে এসব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া সমাগম ঘটবে। পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চল সব সময়ই অবহেলিত ছিলো। এখন যদি পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যাপক প্রসার এবং পর্যটন সেক্টও উন্নয়নের পাশাপাশি সম্ভবনার নতুন ধার উম্মোচন হবে।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বার্তা২৪.কমকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তা বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরো বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবন-জীবিকা বদলে যাবে। দক্ষিণাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এই জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করবে পদ্মা সেতু।

পর্যটন করপোরেশনের কুয়াকাটার ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র নন্দি বার্তা২৪.কমকে জানান, পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর পর থেকে পায়রা সমুদ্র বন্দর, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় গড়ে উঠছে আধুনিক মানের হোটেল-মোটেল, শিল্পায়নসহ নানা স্থাপনা। পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে ও সহজভাবে এখানকার পর্যটন এলাকায় ঘুরে যেতে পারবেন। বিশেষ করে কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে পর্যটকদের বেশি সমাগম হবে। এছাড়াও রেল সংযোগ চালু হলে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটবে।

তিনি আরো জানান, এসব এলাকায় শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান নির্মাণ করা  ছাড়া কোন জায়গা ফাঁকা নেই বললেই চলে। সবমিলিয়ে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ফলে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বেকারত্বের হারও কমার পাশাপাশি  স্বাবলম্বী হবে এখানকার ব্যবসায়ীরা।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ডক্টর অমিতাভ সরকার বার্তা২৪.কমকে জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। একই সাথে এসব অঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীক সর্ম্পক গড়ে উঠবে।

পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ভাবে গড়ে উঠবে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও কল-কারখানা। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগ বাড়বে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও অর্থনীতিতেও আসবে গতি। চালু হবে রেল সংযোগ। ফলে জাতীয় উৎপাদনে দক্ষিণাঞ্চলবাসী ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। যা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ব্যাপকহারে বৃদ্ধিসহ ২০৪১ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণেও ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী এই বিভাগীয় অভিভাবক।

সুবর্ণচরে কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন
‘হেলথকেয়ার হিরোস’দের ওয়ালটনের সংবর্ধনা

আপনার মতামত লিখুন