বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

পদ্মা সেতু ঘিরে উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনার পর্যটন

ডেস্ক রিপোর্ট
১৩ জুন ২০২২

যানবাহন চলাচলের জন্য আগামী ২৫ জুন খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দেশের সড়ক যোগাযোগে উন্মুক্ত হবে এক নতুন দিগন্ত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এই সেতু বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের পর্যটনের পালেও লাগতে চলেছে নতুন হাওয়া।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগেই পদ্মার মুন্সিগঞ্জ অংশে আসেন তরতাজা ইলিশের স্বাদ পেতে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বেড়াতে আসা এই মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতে থাকায় ভ্রমণপ্রেমীদের আনাগোনা বেড়েছে আরও। পদ্মার দুই পাড়েই গড়ে উঠছে নতুন নতুন হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, যা ঘিরে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে পর্যটন শিল্প।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা ছাড়ায় ১০ হাজারের বেশি। সপ্তাহের অন্যদিনও সকাল-বিকেল সেতু ঘুরতে আসেন শত শত মানুষ। মাওয়া ঘাটে সারারাত ইলিশ খাওয়ার আয়োজন তো থাকেই।

শুধু সেতু ঘুরে দেখা ও ইলিশ খাওয়াসহ একদিনের ট্যুরের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বেশ কয়েকটি ট্যুর এজেন্সি। ঢাকা থেকে যাওয়া-আসা, খাওয়া, ঘোরাসহ জনপ্রতি আটশ বা এক হাজার টাকা নেবে এসব প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে বুকিং নেওয়াও শুরু করেছে তারা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পর্যটনের মানচিত্র পাল্টে দেবে পদ্মা সেতু। দ্রুততম সময়ে যাওয়া যাবে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও সাগরকন্যা কুয়াকাটা। লঞ্চে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। তবে পদ্মা সেতু হয়ে গেলে অর্ধেক সময়েই পৌঁছানো যাবে। গত বছরের অক্টোবরে পটুয়াখালীর লেবুখালী সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় এ যাতায়াত আরও সহজ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্রিয়াব) প্রেসিডেন্ট খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে সড়কপথে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে ছয় ঘণ্টারও কম সময় লাগবে।

‘পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন বলতে গেলে নেই। সেতু উদ্বোধন হলে ওইসব এলাকায় পর্যটনে গতি আসবে। দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনে আসবে বিরাট পরিবর্তন। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পদ্মা সেতু হলে অল্প সময়ে কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। সুন্দরবনের স্পটগুলোতেও যাওয়া যাবে খুব সহজেই। পাশাপাশি যশোর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরের পর্যটন স্পটগুলোও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।’

সংযোগ সড়কে বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের হিড়িক
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরের দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের উভয় পাশেই পর্যটকদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে বিনোদনকেন্দ্র, খাবারের দোকান, চা-কফি শপ, খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ।

শরীয়তপুরের নওডোবা মোড়ে গত বছর ফুড এক্সপ্রেস নামে রেস্তোরাঁ খুলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা তারিক আহমেদ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে খাবার ও বিনোদনকেন্দ্রের একটা চাহিদা সৃষ্টি হবে। এটা ভেবেই গত বছর রেস্তোরাঁ শুরু করি। প্রথমে কিছুদিন লোকসান হলেও যতই সেতু উদ্বোধনের দিন ঘনিয়ে আসছে ততই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে।

‘শুধু এখানে নয়, সেতু সংলগ্ন সড়কে এমন রেস্তোরাঁ ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। আশা করছি সেতু চালু হলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়বে।’

ফরিদপুরের ভাঙ্গার চাররাস্তা মোড়ে গোলচত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় কয়েকটি স্পট। একই অবস্থা মাদারীপুরের শিবচরেও।

ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের দুই পাশে শতাধিক অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। দপদপিয়া, বিমানবন্দর, গড়িয়ার পাড়, শিকারপুর এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে খাবারের দোকান ও বিনোদনকেন্দ্র।

পদ্মা সেতু দেখতেই প্রতিদিন ভিড়
পদ্মা সেতু দেখতে শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আসছেন শত শত মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা ছাড়ায় ১০ হাজারের বেশি। মাওয়া প্রান্ত থেকে শুধু সেতু দেখতেই প্রতিদিন ৩০টির বেশি স্পিডবোট ছেড়ে যায়। সপ্তাহের অন্যান্য দিন ২-১টা ট্রিপ পেলেও শুক্র ও শনিবার তা ১০ থেকে ১২টা ছাড়ায়।

স্পিডবোটচালক শামসুদ্দিন বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুরের পর থেকে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত যেহেতু সেতু দেখা যায় সেহেতু বিকেলেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। তবে সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে কাছে ঘেঁষতে পারছেন না তারা।

কয়েকজন হকার ও খাবার বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। এ কারণে ছুটির দিনে তাদের বেচাকেনা দ্বিগুণের বেশি হচ্ছে।

মাওয়ার হোটেল ব্যবসায়ী আলিফ হোসেন বলেন, শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীর ভিড় তো আছেই। তবে পদ্মা সেতুর কারণে গত কয়েক মাস ধরে জনসমাগম বেশি। সেতুকে কেন্দ্র করে মাওয়াঘাট এখন পর্যটনের মধ্যমণি।

সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভ্রমণপিপাসু এসব মানুষের চাহিদা মেটাতে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের যেন আন্তরিকতার কমতি নেই। আতিথেয়তার সবটুকু দিয়েই পর্যটকদের সেবা দিচ্ছেন তারা। আদি পেশা বদল করে অনেকেই মাওয়া-জাজিরা এলাকায় পর্যটনকেন্দ্রিক নতুন ব্যবসা কিংবা অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করছেন।

জুতার কারখানায় কাজ করা মুক্তাদির আলী বলেন, একটা কারখানায় কাজ করতাম। সেখানে মাসে ১৫ হাজার টাকা পেতাম। ছয় মাস হলো মাওয়ায় পর্যটকদের কাছে পুতুল ও খেলনা বেচি। শুধু বিকেলে খেলনা বিক্রি করেই মাসে ২০ হাজার টাকা থাকছে। সেতুর কারণে অনেক মানুষের আয় রোজগার বাড়ছে।

ওমরাহ ভিসায় পুরো সৌদি আরব ভ্রমণ করতে পারবে বাংলাদেশিরা
জাপানি স্ট্যান্ডার্ডে ব্যাটারি উৎপাদন করছে ওয়ালটন

আপনার মতামত লিখুন