মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

সুন্দরবনে বিপদে জেলে-বনজীবী-পর্যটক

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ মার্চ ২০২২

সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের রাজস্ব বেড়েছে দ্বিগুণ। বনজীবীদের রাজস্বও বেড়েছে সমহারে। এছাড়া গোলপাতা-কাঁকড়ায় রাজস্ব বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। ভ্রমণ মৌসুমের শেষ সময়ে বনবিভাগের এই সিদ্ধান্তে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত ও বনের উপর নির্ভরশীল উপকূলীয় বনজীবীরাও পড়েছেন চরম শঙ্কায়।

বন মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনে ধার্য করা রাজস্বের তালিকা থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের সাধারণ জায়গাগুলোতে মাথাপিছু দেশি পর্যটকের ভ্রমণ ফি ছিল প্রতিদিনের জন্য ৭০ টাকা, সেটা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। বিদেশি পর্যটকের আগে রাজস্ব দিতে হত প্রতিদিন ১০০০ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০০০ টাকা।

আগে সুন্দরবনের ভেতরে কটকা, কচিখালী, নীলকমল, হিরণ পয়েন্ট, নোটাবেকী, পুষ্পকাঠি, মান্দারবাড়িয়া, হলদেবুনিয়ার মতো সরকারঘোষিত অভয়ারণ্যে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের প্রতিদিন ভ্রমণ ফি দিতে হতো যথাক্রমে ১৫০ ও ১৫০০ টাকা। এখন তা দ্বিগুণ বেড়ে যথাক্রমে ৩০০ ও ৩০০০ টাকা হয়েছে। অবস্থান ফি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, একদিনের পাসে কলাগাছিয়া ট্যুরিস্ট কেন্দ্রে ২০ টাকার ফি ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি গাইড ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও সবকিছুর ওপর রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

সরকারের নতুন এসব সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়বে পর্যটন শিল্প এমন দাবি করেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা। ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনে’র চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুর ইসলাম জানান, রাজস্ব বৃদ্ধিতে পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব পড়বে। দেশি- বিদেশি পর্যটক যাতে কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারেন, সেদিকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসেসিয়েশন অফ সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ট্যুর অপারেটররা গত ২ বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবছর পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় তারা ফের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন আবার বনবিভাগ রাজস্ব বৃদ্ধি করায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

নাজমুল আজম ডেভিড ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পর্যটনকে নিয়ে সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করলেও, যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করায় ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত হয় না। এর ফলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ি। পর্যটন শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত এবং ট্যুর অপারেটররা আর্থিকভাবে ক্ষতির কবল থেকে রেহায় পেতে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য সংগঠনটির পক্ষ বনবিভাগের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।’

একইসঙ্গে সুন্দরবনে পর্যটনের পাশাপাশি দুবলার চরে রাসমেলায় পুণ্যার্থী ও সুন্দরবনে সব ধরনের বনজীবীদের জন্যও নতুন রাজস্ব হার নির্ধারণ করে দিয়েছে বন বিভাগ।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গোলপাতা প্রতি কুইন্টাল ২৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের ভেটকি মাছের রাজস্ব প্রতি কুইন্টালে ১২০০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা ও কাঁকড়া কুইন্টাল প্রতি ২৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে।

খুলনা রেঞ্জের বনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পান-ইয়াসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। করোনায় কাঁকড়াসহ মাছের দাম পড়ে যায়। অনেকাংশে কমে যায় চাহিদা। অপরদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের। এরইমধ্যে বনবিভাগ দ্বিগুণের বেশি রাজস্ব বৃদ্ধি করে তাদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে।’

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে সবার ক্ষেত্রেই রাজস্ব বৃদ্ধি করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর আগে ২০১১ সালে রাজস্ব বাড়ানো হয়েছিল। সব ক্ষেত্রেই রাজস্ব বেড়েছে। আমাদের তো দীর্ঘদিন পরে বাড়ল।’ এতে বনজীবী কিংবা পর্যটক কারও উপর তেমন চাপ পড়বে না বলেও তিনি মনে করেন।

বান্দরবানের রুমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটকবাহী জিপ বন্ধ
ওয়ালটন কক্সবাজার রেফারিজ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

আপনার মতামত লিখুন