বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

কলকাতায় যে কারণে বাড়ছে বাংলাদেশি পর্যটক

অনলাইন ডেস্ক
০৮ নভেম্বর ২০২২

ভারতের কলকাতায় আবারও বাড়ছে বাংলাদেশি পর্যটকদের যাতায়াত। মাঝে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু জটিলতার কারণে থমকে গিয়েছিল পদ্মাপারের মানুষের ওপারে যাওয়ার প্রবণতা। কিন্তু ফের বাংলাদেশি মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধিতে চাঙা হয়ে উঠছে নিউমার্কেটসহ মধ্য কলকাতার বিস্তৃর্ণ এলাকার অর্থনীতি।

কেউ যান চিকিৎসার জন্য করাতে, কেউবা আবার বেড়াতে। চিকিৎসা-বেড়ানোর মাঝেই চলে কেনাকাটা। আর শহরটির নাম যখন ‘সিটি অব জয়’, তখন শহরটির নানা রকমের সুস্বাদু খাবারও চেখে দেখতে ছাড়েন না বাংলাদেশি পর্যটকরা। 

মধ্যকলকাতার মার্কুইজ স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিঁদয় স্ট্রিট, নিউমার্কেট এলাকার অলি থেকে গলি; বাংলাদেশের পর্যটকদের বরাবরই সব চেনা-জানা। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যারা অবসরে একটু বিদেশে যাওয়ার স্বাদ নিতে চান তাদের পছন্দের তালিকায় প্রতিবেশী কলকাতা থাকে শীর্ষে। তাই সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যান বিশ্বকবির শহরে। তাই এ শহরের অনেক কিছুর সঙ্গেই বাংলাদেশি পর্যটকরা পরিচিত।  

রেজানুর রহমান নামে কলকাতায় যাওয়া ঢাকার মতিঝিলের এক বাসিন্দা জানালেন, তার সেখানে যাওয়ার মূল কারণ কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ। বিদেশ হলেও, খাদ্য-পোশাক-ভাষা এবং আবহাওয়ার মিল থাকায় সুযোগ হলেই কলকাতায় বেড়াতে যান তিনি। এছাড়াও বাড়তি পাওনা শপিং। যাওয়া হয় চিকিৎসা জন্যও।  

মো. মাসুদ রানা নামে বাংলাদেশের আরেক পর্যটক বললেন, থাকি নারায়ণগঞ্জে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর যোগাযোগ সহজ হয়েছে। তাই সুযোগ হলেই কলকাতায় চলে আসি। এখানকার খাবার যেমন পছন্দের, সঙ্গে কেনাকাটাও। 

দুজন পর্যটকই জানালেন, ইচ্ছে থাকা সত্বেও মাঝে কিছুদিন তারা কলকাতা যাননি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং টাকার দাম কমে যাওয়ার কারণেই বাতিল করতে হয় কলকাতা ভ্রমণের পরিকল্পনা। তবে এখন রুপির বিপরীতে টাকার দাম বেড়েছে। 

করোনার কারণে গোটা বিশ্বের মতো গত দুই বছর মুখ থুবরে পড়েছিল ভারতের পর্যটন শিল্প। যার ধাক্কা লেগেছিল কলকাতায়ও। এরপর করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, প্রভাব পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতি। যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশের টাকা আর ভারতের রুপির মান কিছুটা বেড়ে যাওয়ায়, ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভারতের বাংলাদেশনির্ভর পর্যটন শিল্পে। 

মার্কুইজ স্ট্রিটের একজন মুদ্রা ব্যবসায়ী পবিত্র বেড়া। তিনি বলেন, মাঝে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসার ওপর মারাত্বক প্রভাব পড়ে। তবে এখন টাকার দাম বেড়ে যাওয়ায় আবার বাংলাদেশি পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। এমন পরিস্থিতি থাকলে শীত মৌসুমে আমাদের ব্যবসা ভালো হবে। 

একই এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী নেসার আহমেদ জানালেন, আগের তুলনায় এখন বাংলাদেশি পর্যটক বেড়েছে ৭০ শতাংশ। যদিও তার মতে, আগে কলকাতা ট্রানজিট রুট থাকায় অনেক পর্যটক কলকাতা হয়ে ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে যেতেন। কিন্তু এখন ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়া যায়। ফলে অনেকেই কলকাতায় না এসে সরাসরি নিজেদের গন্তব্যে চলে যান। 

লিটন ধর নামের একজন পরিবহন ব্যবসায়ীর দাবি, মাঝে ভীষণ খারাপ পরিস্থিতি গেছে। বাসের অর্ধেক সিট ফাঁকা থাকত। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই।   

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে সরকারি বাস চলে ৪টি এবং কাটা সার্ভিস চালু রয়েছে ১৫টি। প্রতিদিন এই রুট দিয়ে বাসে করে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন অন্তত দেড় হাজার পর্যটক। এছাড়া ট্রেন, বিমান কিংবা সীমান্ত দিয়ে স্থল পথে যাতায়াতকারী পর্যটকের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের বেশি। 

যদিও অনেক বাংলাদেশি পর্যটকের অভিযোগ, ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। তাছাড়া অনেক ভারতীয়দের মধ্যে নেই ইতিবাচক অতিথিসুলভ মানসিকতাও। 

কিন্তু এরপরও প্রতিবেশী দেশের এই রাজ্যের শহরে যাচ্ছেন প্রচুর বাংলাদেশি, করছেন পছন্দের কেনাকাটা, খাচ্ছেন নানা স্বাদের খাবার এবং অবশ্যই দিচ্ছেন মাটির ভারের চায়ের কাপে চুমুকও।

পর্যটন ভাবনা: মালদ্বীপ পারলে আমরা পারবো না কেন?
বান্দরবানের ৩ উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ল

আপনার মতামত লিখুন