শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

একের পর এক বন্ধ হচ্ছে ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রতিষ্ঠান

করোনায় বিপর্যস্ত পর্যটনশিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ জুলাই ২০২১

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের পর্যটনশিল্প। পর্যটকদের আনাগোনো না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের প্রায় দেড় হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট, জাফলং, সুন্দরবন, পার্বত্য জেলাসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় প্রায় এক হাজার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট পর্যটকশূন্য। প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত প্রায় এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে বসে আছেন। এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে আয়-রোজগারে সম্পৃক্ত অসংখ্য লোক আয় থেকে বঞ্চিত। শুধু কক্সবাজারে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩৫ হাজার কর্মী বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। এই শিল্পে বিনিয়োগকারীরাও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণের বোঝা টানতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যয় মেটাতে না পেরে অনেকেই অফিস গুটিয়ে ফেলেছেন। ঈদের আগে কঠোর লকডাউন উঠে গেলে পর্যটন ব্যবসায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখবে বলে এ ব্যবসায় জড়িতরা মনে করছেন।
সংশ্নিষ্ট সূত্র বলছে, করোনা শুরুর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে পাঁচ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণে গেছেন ১৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়ান ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন বিদেশি পর্যটকও বাংলাদেশে ঘুরতে আসেননি। বাংলাদেশের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো পর্যটকদের টিকিট, হোটেল-মোটেল বুকিং, পরিবহন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধায় নিয়োজিত থাকেন। করোনা শুরুর আগে তাদের অফিস পরিচালনা ও স্টাফদের বেতন পরিশোধসহ অন্যান্য বিষয়ে কোনো অসুবিধা হতো না।
জানা যায়, ট্যুরিস্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, মেডিকেল ভিসা, হজ ও ওমরাহ ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস এবং ট্যুর প্যাকেজ, ট্যুর কনসালট্যান্সি ও এয়ার টিকিটিংয়ের কাজ করে থাকে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো। প্রতি মাসে হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে ভ্রমণ করেন। গত দুই দশকে এই খাতে নতুন করে অন্তত দুই হাজার উদ্যোক্তা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু গত দুই বছরে করোনার কারণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। থেমে গেছে নতুন কর্মসংস্থানের পথ। উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) ও ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর নেতারা জানান, করোনাভাইরাস দেশের সার্বিক পর্যটন খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। গত বছর প্রথমবার সকল পর্যটন স্পটে লকডাউন জারি করে সরকার। সেই থেকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে বিমানসহ দেশ-বিদেশের হোটেল-মোটেল ও ট্যুরিজম শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষ।
এ বিষয়ে আটাব সভাপতি মনসুর কালাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বৈশ্বিক করোনার ছোবল আসার পরপরই পর্যটনশিল্পকে বাঁচাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে পর্যটন-সংশ্নিষ্ট প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, করোনাভাইরাসের আগে এই সেক্টরকে রক্ষা করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এই শিল্পে ক্ষতি নির্ধারণে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস (বিআইডিএস)-এর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর কারা ট্যুরিজমের আওতায় আসবে তা নির্ধারণ করা হবে। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিজম বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চলছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে সেবা খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর আওতায় পর্যটন খাতও রয়েছে। তিনি বলেন, চাকরি হারানোদের মধ্যে ৩০০ জনের তালিকা করা হয়। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যে তাদের নামের তালিকা জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কীভাবে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায় সেজন্য সকলের সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রয়েছে।
টোয়াবের সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, প্রতি বছর ৫ লাখের বেশি বিদেশি ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে আসেন। দেশের কর্মীরা তাদের বিমানবন্দরে গ্রহণ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে দেখানো এবং সর্বশেষ বিদায় দেওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ওই ট্যুর গাইড যেভাবে উপস্থাপন করেন, সেভাবেই বিদেশিরা বাংলাদেশকে চেনে। ফলে তারা এক-একজন বাংলাদেশের অ্যাম্বাসাডর। তারা দক্ষ হয়ে গড়ে উঠেছেন। তারা না থাকলে এই শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

ওয়ালটন পণ্যই আমাদের নির্ভরতা: সাইমন সাদিক
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিশেষ সাধারণ সভা

আপনার মতামত লিখুন