বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

পটুয়াখালীর পর্যটনশিল্প ঘিরে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ জানুয়ারি ২০২২

করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটাসহ পটুয়াখালীর অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। তবে করেনাকালে দীর্ঘ লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিকসহ বিশাল একটির অংশ বর্তমানে মূলধন সংকটে রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা দেওয়া হলে পর্যটন শিল্পনির্ভর ব্যবসায়ীরা আবারও পূর্ণ উদ্যোমে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন বলে অভিমত তাদের।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে পূর্ণতা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী জানান, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই টিকে আছে পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্রগুলো। তবে প্রচারের অভাবে বেশিরভাগ পর্যটন স্পটগুলোই সাধারণ মানুষের নজরে আসে না। পটুয়াখালী জেলায় সমুদ্র সৈকতকেন্দ্রিক একাধিক পর্যটন স্পট রয়েছে। শুধুমাত্র উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মানুষ কুয়াকাটা ভ্রমণে আসে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের থেকে আরও সুন্দর সুন্দর একাধিক সমুদ্র সৈকত রয়েছে পটুয়াখালীতে। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে পর্যটকরা সেখানে পৌঁছাতে পারে না। এছাড়া ঐতিহাসিক বিভিন্ন নির্দশন রয়েছে পটুয়াখালীতে। যেগুলো সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্রগুলো হলো-
মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ: পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া গ্রামে পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত এক পুরাতন মসজিদ সুলতানি আমলের স্থাপত্যকীর্তি নিয়ে আজও সগৌরবে বিদ্যমান আছে। স্থানীয়ভাবে এটি মসজিদ-ই-মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ নামে পরিচিত। মির্জাগঞ্জ উপজেলা সদরের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এই মসজিদটি অবস্থিত। স্বাধীন বাংলার ইলিয়াস শাহী শাসনামলের শেষ দিকে নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের পুত্র রুকুন উদ্দিন বারবক শাহের (১৪৫৯-১৪৭৬খ্রি.) শাসন আমলে খান-ই মোয়াজ্জম উজিয়াল খান ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদের গায়ে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

পাষাণময়ী কালী মন্দির: বাংলা ১৩০৬ সালে জমিদার বিশ্বেশ্বর রায় চৌধুরী তার লোকদের আদেশ দেন কালী মন্দির প্রতিষ্ঠার। ইসিবপুর নিবাসী স্বরূপ চন্দ্র দে রাজমিস্ত্রী দ্বারা মন্দির নির্মাণ করে তার মধ্যে শ্মশান প্রস্তত করা হয়। নায়েব চন্দ্র কুমার সরকার কলিকাতা থেকে তৈরি করে ১৩০৭ সালের ১৮ আশ্বিন কলসকাঠীতে আনেন কালী মাতার বিগ্রহ। ৫ বছর ৮ মাস ১১ দিন পর ১৩১৩ সালের ২৯ জ্যৈষ্ঠ কলসকাঠী থেকে পটুয়াখালী শহরের প্রাণ কেন্দ্র জমিদার বিশ্বেশর রায় চৌধুরীর কাছারি বাড়ি প্রাঙ্গণে (বর্তমান এ্যাকোয়ার স্টেটেট,সদর ভূমি অফিস সংলগ্ন) এই মন্দিরে আনা হয় কালী মাতার বিগ্রহ এবং তা ৮ বছর ১০ মাস বিনা প্রতিষ্ঠায় থাকে।

ডাকাতিয়া কালীবাড়ি: সেন্টারপাড়ার এই কালী বাড়ি ৫ শত বছরের পুরনো বলে অনেকে দাবি করেন। একদল কাপালিক ছাড়া অন্য কোন জনমানবের পদচারণা ছিল না এই ভূখন্ডে। গভীর অরণ্যে ঘেরা সুন্দরবনাঞ্চলের মাঝে উঁচু মাটির টিলার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল এই মন্দির (বর্তমান সেন্টারপাড়া কালি মন্দির)। ওই মন্দিরে চৈত্র অমাবশ্যায় কালী পূজায় দেবীর নামে উৎ্সর্গ করে দেয়া হতো নরবলি।

কুয়াকাটা-সুন্দরবন-সোনারচর: পটুয়াখালী জেলার পর্যাটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশি পর্যাটকরা প্রতিনিয়ত ভিড় করেন কুয়াকাটায়। পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ এখানকার আদিবাসী রাখাইনদের স্থাপত্য শিল্প। এসব স্থাপত্য নিদর্শন পর্যাটকদের হৃদয় কেড়ে নেয় । সৈকতের কোল ঘেসেই উপজাতি রাখাইন সম্প্রদায়ের কেরানিপাড়া। এখানে আছে শত বছরের পুরানো সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কুয়াকাটা বেড়িবাধেঁর পাশে খানিকটা উচুঁ টিলার উপর এর অবস্থান।

পটুয়াখালীতে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলো হলো কলাপাড়ার পাখিমারা এলাকায় পানি জাদুঘর,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শ্রীরামপুর জমিদার বাড়ি, কলাপড়ায় অবস্থিত রাডার স্টেশন ও আবহাওয়া অফিস,পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকা, দশমিনার বীজ বর্ধন খামার,পায়রা কুঞ্জ, লেবুখালী কৃষি উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, কুয়াকাটা কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসা করোনা অতিমারীর আগে যে অবস্থায় ছিল দেড় বছরের লকডাউনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা। বর্তমানে মূলধন সংকেটর কারণে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গেছে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায় থেকে কোন সহয়তা পায়নি। সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে এ পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ী তার একটি টাকাও পায়নি।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওয়ানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব শরীফ জানান, সরকারের দপ্তরের পর দপ্তর ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু করোনা অতিমারীর কোন সহায়তা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌছতে পারেননি।

তিনি জানান, হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা অনুদান চায় না। তারা স্বল্প সুদে ঋণ চায়। ব্যবসা স্বাভাবিক হলে আবার ঋণের টাকা ফেরত দেবে তারা। পর্যটননির্ভর ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ঋণ সহয়তার কোন বিকল্প নেই বলে দাবি করেন তিনি।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান,পটুয়াখালীর পর্যটন ব্যবসা থেকে কি পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান জেলার কোন দপ্তরে নেই। তবে সরকার পর্যটন শিল্প বিকাশে সমন্বিত একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আগামী কয়েক বছরে এ প্রকল্পগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে। উপকূলীয় এলাকাকে ঘিরে সরকারের একটি গুচ্ছ পর্যটন শিল্প বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ যে সম্ভবনাময় পর্যটন স্পটগুলো রয়েছে, সেগুলোর মানোন্নয়ন করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আর্কষণ করতে পারলে আরো বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

ভ্রমণে নতুন শর্ত সরকারের
পর্যটন করপোরেশনে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ

আপনার মতামত লিখুন