শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

তাঁদের ফোকাসে আনতে হবে আমাদের স্বার্থেই

মিজান বিন মজিদ
১৭ জুন ২০২০

মেধা বা প্রতিভা সবকালে সম্মাননা পাবার কথা। মেধা বা প্রতিভার মূল্যায়ন না হলে সমাজ সংসার সভ্যতা সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের দেশে পুঁথিবিদ্যার পরিসংখ্যানকে আমলে নিলে, মুখস্থবিদ্যাকে প্রামাণ্য মানলে অথবা ফি বছর প্রকাশিত পাবলিক ইক্সামের সারণিকে গ্রাহ্য করলে সবচেয়ে মেধাবী হিসেবে ঢামেকসহ মেডিক্যাল স্টুডেন্টরা আর বুয়েটের ছাত্ররা স্বীকৃত হবার কথা। অযুত লোকে সেটা প্রকাশ্যে না হলেও মনে মনে মান্য করে!

ডাক্তারদের সরকারি অসরকারি নিয়োগে পদপদবী খুব আকর্ষণীয় নয়। পাব্লিক ভার্সিটির অনেকের কথা তারা নীরবে মেনে চাকরি জীবন পার করেন নীরবে। মাঝেমধ্যে সুযোগসুবিধে নিয়ে কিছু ক্ষোভবিক্ষোভ হয় নি এমন নয়। তবে তাঁরা সাধারণত সেবার মহানব্রতে বিনিয়োজিত থেকেই আনন্দ পান। সব ডাক্তার শুধু সেবা দেন, লাভালাভ নিয়ে ভাবেন না, এমন বলছি না। বলছি, তাঁরা অন্য দশটি পেশার মানুষের মতন লোকরঞ্জন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন না। সময়ও নেই। আমরাও এইসব নীরব ধ্যানী গুণী মানুষের অন্তরজগতে কখনো প্রবেশ করতে চাই নি। অনেকটা অবহেলা আর অবিশ্বাস্য অবলীলায় তাঁরা নিজেদের গুটিয়ে রাখেন আমাদের চলমান প্রকাশবাদের হল্লা থেকে।

বিশ্বকে বেতাল করা, বিপুল বিক্রমে বিধ্বংসী রূপে এগিয়ে যাওয়া বিশ্বমারী করোনাকালে আমাদের নীরবসাধক 'সাইলেন্ট হিরো' ডাক্তাররা চলে এসেছেন আলোচনা সমালোচনার সম্মুখ সারিতে। কেউ কেউ নিবেদনের শংসায় নন্দিত হচ্ছেন।কেউবা দুর্বলচিত্তের পরিচয় দিয়ে পলায়নপর থেকে পেশার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছেন। সব পেশার মতই এইখানে সজ্জন-দুর্জন আছেন। আছেন ঋষী, থাকার কথা মুষিক!

সিলেটের ডাক্তার মঈন উদ্দিনের মর্মান্তিক বিদায়ে আমরা বেদনার্ত হয়েছি। তাঁর পথ ধরে এই দেশের চল্লিশজন মহান ডাক্তার দেশের মানুষের সেবা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন।আক্তান্ত হয়েছেন দেড় হাজারের উপর চিকিৎসক মরণব্যাধি কোভিড-১৯ এ। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অন্য পেশার লোকের আক্রান্তের সংখ্যাও অগণন।

সম্প্রতি দুইটি ঘটনায় ডাক্তারদের প্রতি আমদের অবহেলাটি পষ্ট হয়ে গেছে। একটি দৈনিক তাদের বিশেষ স্টোরি সাজিয়েছে করোনায় মৃত্যুবরণকারী বিশিষ্টজনদের নিয়ে।সেখানে তাঁরা চিকিৎসকদের রাখেন নি। পরে দ্বিতীয় কিস্তির কথা বলেছেন। এটাকেও দায়সারা বলে পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন। অন্য সময়ে আপনি যাদের নিয়ে উচ্ছ্বাস উল্লাস আর দেখনদারি করতেন, এই সময়েও তা অব্যাহত রাখা অপ্রাসঙ্গিক। জীবনের মায়া ত্যাগ করে,পরিবারকে অনিরাপদ রেখে যারা চিকিৎসার মতন শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে আত্ম নিবেদন করছেন; তাঁদের এখনও দ্বিতীয় সারিতে রাখবেন? এটা মোটেই সমীচীন চিন্তা নয়।  

একজন ডাক্তার রোগীর স্বজনের বর্বর আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। মিডিয়ায় এই খবর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হয় নি। এই দুঃসময়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত কারুর উপর এমন অমানবিক জঘণ্য আক্রমণ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমও যথেষ্ট সরব হয় নি। ভিনিদেশের নায়কের অকাল প্রয়াণ বা এমম্বিদ খবরে আমরা যতটা বিচলিতবোধ করি, ডাক্তারদের ত্যাগ সংগ্রাম সাধনা আর বিনিদ্ররজনী গল্পকে ততটা মূল্য দেই না। 

আমাদের ডাক্তাররা আমাদেরই পরিবেশের সন্তান। তাঁদের নিষ্ঠুর সমালোচনা করবার অধিকার আপনার যেমন আছে, তেমনি তাঁদের অকুতোভয় সাহস, দুর্দান্ত দেশপ্রেম আর নৈতিক মনোবলের উদার প্রশংসাও কর্তব্য নয় কী? যারা কথায় কথায় বিদেশগামী হতাম, তুচ্ছ রোগের অতি তুচ্ছ দাওয়াইয়ের জন্যে তাদের অমনোযোগকেও দায়ী করুন না; এই খাতের বেবাক দুর্ভাগ্যের জন্য! প্রতিদিন বেড়ে চলা মহামারী কোভিডকালে মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া আমাদের মুক্তির পথ নেই। গোটা দুনিয়া যখন শঙ্কিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় আর দিশাহীন তখন হাসপাতালে হাসপাতালে আমাদের প্রিয় ডাক্তারদের নিবিরাম খাটুনি, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অব্যাহত উদ্যোগকে আমাদেরই স্বার্থে ফোকাসে আনতে হবে। নইলে শহিদ ডাক্তার মঈন উদ্দিনদের অতুলনীয় অধ্যবসায় অভাবনীয় মানবিকতা আর অভূতপূর্ব পরার্থপরতা  আমাদের একদেশদর্শী মনোভাবকে উদোম করে দেবে। করোনাযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সব চিকিৎসকের জন্যে আমাদের লাল সালাম।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ

করোনা মোকাবিলায় পায়রা বন্দরকে সুরক্ষা সরঞ্জাম দিল সাইফ পাওয়ার
র‌্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন করোনামুক্ত

আপনার মতামত লিখুন