শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

অর্পণ দাশগুপ্ত
০৭ জানুয়ারি ২০২২

পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সপ্তম শতকে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে উচ্ছসিত হয়ে বলেছিলেন, A sleeping beauty emerging from mists and water. এই প্রশংসাকে সর্বদা ধরে রাখার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশের দায়িত্ব আমাদের। সরকারের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি উদ্যোগে বিকাশ ঘটাতে পারি পর্যটন শিল্পের। সম্মিলিতভাবে যদি প্রচেষ্টা চালাই তাহলে অচিরেই পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে স্থান করে নেবে। সকলে মিলে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিকে অনিবার ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলি। আর জগদ্বাসীকে আপন করে গ্রহণ করি নিজের দেশে পরম আতিথেয়তায়।

দুই.

বর্তমানে অতি বেশি আকারে পরিলক্ষিত হচ্ছে, অল্পবয়সী শিশু-কিশোররা কালক্ষেপণের জন্য কম্পিউটার/ ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং ট্যাবে সর্বনাশা ভিডিও গেমসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। যা সত্যিই বিপদজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের বেশির ভাগ ভিডিও গেমসের মূল প্যাটার্ন সাজানো থাকে হিংসা- বিদ্বেষ, মারামারি এবং ভায়োলেন্স দিয়ে। যা সহজেই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই সময় থাকতেই এ সকল ভিডিও গেমসের পরিবর্তে ছোটদের সুস্থ চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে শিশুদের অভিভাবক এবং সকলকে একান্তভাবে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিন.

লোকাল বাসে চলাফেরা করার সময় এটি লক্ষণীয়- বাসে মহিলা, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসন থাকলেও সেটা পরে বেদখল হয়ে যায় মুষ্টিমেয় কিছু লোকের দ্বারা। যেটা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং অনভিপ্রেত। এছাড়াও বাসে নারী হয়রানি এবং হেনস্থা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই অবিলম্বে লোকাল বাস এবং পাবলিক প্লেসে এসকল নারী হয়রানি এবং হেনস্থাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা এবং সর্বত্র নারী পুরুষের সমধিকার নিশ্চিত করা এখন শুধু সময়ের দাবি।

চার.

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কুটিরশিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। তাছাড়া জনবহুল বাংলাদেশের বেকার সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রেও কুটিরশিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কুটিরশিল্পের সঙ্গে আমাদের লাখ লাখ দরিদ্র জনগণের ভাগ্য জড়িত। তাই কুটিরশিল্পের গৌরবময় ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারলেই আমাদের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ জন্য দরকার সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত ঐকান্তিক চেষ্টা। মোট কথা, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দরিদ্র জনসাধারণের ভাগ্য পরিবর্তনে কুটিরশিল্পের প্রয়োজন এবং এটির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সকলের উচিত কুটিরশিল্পের উপর যথাযথ গুরুত্বারোপ করে পৃষ্ঠপোষকতা করা।

পাঁচ.

আধুনিক সভ্যতার গতিশীল চক্রের এক অবশ্যম্ভাবী ফল বিশ্বায়ন। তাই বিশ্বায়নকে নব্য উপনিবেশবাদ ধারণার মাঝে কেবল ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্বায়নকে যত নেতিবাচক বিশেষণেই ভূষিত করা হোক না কেন, বিশ্বায়ন এগিয়ে যাবে তার নিজস্ব গতিতেই। এর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো রাষ্ট্রই দূরে থাকতে পারে না। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া বিশ্বায়নের ফলে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর অর্থনৈতিক বিষয়টি তখনই ফলপ্রসূ এবং কার্যকর হবে যখন এর সুফল সর্বত্র সমানভাবে বণ্টন করা যাবে। এজন্য প্রয়োজন সুষম মানের কাঠামোগত উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো। বিশ্বায়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সফল হোক।

ছয়.

পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায়। তবে বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকলে হলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে আইএসও সনদ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু ক্রেতারা বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সর্বোপরি দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পোশাক শিল্পের মানোন্নয়ন, মূল্য হ্রাস করে চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে সরকার, উদ্যোক্তা এবং ব্যাংকগুলোকে। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি পোশাক শিল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য বলেই এই শিল্পের সম্প্রসারণ দরকার। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রদত্ত ব্যবস্থাকে প্রত্যাহার করে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রবল প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। এ জন্য সকলের আন্তরিক সদিচ্ছা এবং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকা প্রয়োজন।

সাত.

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত পৃথিবীতে বহু পরিবর্তন ঘটেছে। সভ্যতার চরম উৎকর্ষ সাধিত হলেও কিছু মানুষের বর্বর চরিত্রের তেমন রূপবদল হয়নি। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি অত্যাচার ও অবিচার নানাভাবে বিদ্যমান রয়েছে। যুগে যুগে বিভিন্ন সমাজ সংস্কারক, ধর্ম প্রবর্তক, মানবতাবাদী মহাপুরুষ সমাজের কল্যাণে বহু দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন। সে সব উপদেশ নির্দেশ পালন করলে সমাজে নারীর মর্যাদা হত। যৌতুক প্রথাই হলো হৃদয়হীন সমাজের সেই নির্লজ্জ হাতিয়ার। এই নির্মম প্রথার পাষাণফলকে লেখা আছে কত নারীর অশ্রুত করুণ কাহিনি। কত বেদনার নিষ্ঠুর ইতিহাস। কত দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রুপাত। এই প্রথার নির্দয় পীড়নে কত জীবন মৃত্যুর মধ্যে পেয়েছে চিরশান্তি। কত নারীর সুখের সংসার হয়েছে ছারখার। যৌতুক প্রথা এমন এক বিষবৃক্ষ যার বিষক্রিয়ায় অনেক শুভ্র নিষ্কলঙ্ক হৈমন্তীর জীবন অকালে ঝরে গেছে। এ এক সামাজিক ব্যাধি। তাই এই বিষবৃক্ষ সমূলে সমাজ থেকে উৎপাটন সময়ের দাবি।

দেশের একমাত্র নীল পানির দ্বীপে একদিন
পাখির চোখে খাগড়াছড়ি দেখতে যেখানে যাবেন

আপনার মতামত লিখুন