বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

ছবির ফাঁদে পর্যটকদের হয়রানি

মো. আল-মামুন
১৩ জানুয়ারি ২০২২

পৃথিবীর মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। সমুদ্র-পাহাড়-নদী সব পর্যটন আকর্ষণই আছে এ দেশটিতে। প্রিয় এই দেশটিকে জানার জন্য প্রয়োজন দেশ ভ্রমণ। অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়ই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রতি বছর ভিড় জমিয়ে থাকেন পর্যটন কেন্দ্রগুলোয়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যুগে যুগে ভ্রমণকারীদের করেছে মুগ্ধ। এর মধ্যে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, অরণ্য, বিস্তীর্ণ হাওর, চা বাগান, এমনকি মেঘের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো চোখ জুড়ানো স্থান রয়েছে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষ কোথাও বেড়াতে যেতে পারেননি। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় খুলে দেয়া হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দীর্ঘদিন ভ্রমণে বের হতে না পারার অস্বস্তি কাটাতে পর্যটন কেন্দ্রে আসার জন্য মানুষ মুখিয়ে ছিলেন। সরকারের স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা মেনেই পর্যটকদের সেবা দিতে প্রস্তুত ছিল কর্তৃপক্ষ। গেল ডিসেম্বরে শীতের ছুটিতে তাই অনেকেই ছুটে যান তাদের পছন্দের জায়গাগুলোয়। পরিবার-পরিজন ও স্বজন কিংবা ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে বেড়াতে গিয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে কে না চায়। আর তাই আনন্দঘন স্মৃতি ফ্রেমে বন্দি করতে অনেকেই মেতে ওঠেন ফটোসেশনে। পর্যটকদের এ চাহিদাকে পুঁজি করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় দিনদিন বাড়ছে ফটোগ্রাফারের সংখ্যা। পর্যটকদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে হরহামেশা ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছিন্নমূল ও অনভিজ্ঞ কিছু কিশোর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ফটোগ্রাফি করছে। এর মধ্যে অনেকেরই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা তো নেই বরং আদব-কায়দারও কোনো বালাই নেই। একজন পর্যটকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয় সেটাও তারা জানে না। আবার এদের মধ্যেই অনেকেই ফটোগ্রাফির আড়ালে পর্যটকদের মালামাল চুরির সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে না বলা সত্ত্বেও একাধিক ছবি তুলে পর্যটকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় পর্যটকদের দেখে ফটোগ্রাফাররা ছুটে আসেন ছবি তুলে দেয়ার জন্য। পর্যটক না করে দিলেও তারা কিছু ছবি তুলে দেয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। প্রতিটি ছবির বিনিময়ে তারা ৫ টাকাকে অনেক সামান্য বলে উপস্থাপন করে। পর্যটকরা ভাবেন, ৫ টাকাই তো, এ তেমন কিছুই নয়। এভাবেই পা দেন ফটোগ্রাফারদের ফাঁদে। ছবি তোলার সুযোগ পেয়ে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে ফটোগ্রাফার। ছবি তোলা শেষে যখন জানতে চাওয়া হয় ছবির সংখ্যা, সেই সংখ্যা শুনে যেন রীতিমতো চোখ কপালে উঠে যায় পর্যটকদের। আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার ব্যবধানে তারা তুলে ফেলে ৫০০-৬০০ ছবি। যার মূল্য দাঁড়ায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। ফটোগ্রাফাররা সব ছবি নেয়ার জন্য পর্যটকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পর্যটকরা সব ছবি নিতে না চাইলে তারা ধমক দেয়। একই ছবি একাধিকবার থাকায় বেছে বেছে ছবি নিতে চাইলে ফটোগ্রাফাররা জুড়ে দেয় আরেক শর্ত। বেছে বেছে ছবি নিলে প্রতিটি ছবির বিনিময়ে পরিশোধ করতে হবে ১০ টাকা করে। এতে পর্যটক পড়েন আরেক ফাঁদে। ছবি বাছাই করল কি করল না দু-চারটি ছবি ডিলিট করে তারা তখন দাবি করে তার থেকে আরও বেশি টাকা। এত টাকা দিতে রাজি না হলে তখন রীতিমতো তাদের সঙ্গে পর্যটকদের কথা কাটাকাটি হয়। এভাবে একপর্যায়ে ফটোগ্রাফাররা তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এই হলো বর্তমান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর চিত্র। তারা মূলত ডিএসএলআরকে পুঁজি করে কৌশলে পর্যটকদের দামি দামি মোবাইল, টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে।

ফটোগ্রাফারের এমন আচরণ প্রায়ই পর্যটকদের আনন্দ নষ্ট করে। তবে ঝামেলা এড়াতে এ ধরনের হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না পর্যটকরা। ফটোগ্রাফারের হাতে হয়রানির শিকারের অভিযোগ এলেও কিছু ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান হয়, অধিকাংশই কূল-কিনারাই পাওয়া যায় না। হয়রানির ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে অধিকাংশ ফটোগ্রাফার তা এড়িয়ে যায়। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয়। ফটোগ্রাফারদের প্রতারণা এড়াতে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ডেটাবেজের আওতায় আনতে হবে। আর কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে কর্তৃপক্ষের কাছে তৎক্ষণাৎ অভিযোগ করতে হবে। কেননা অভিযোগ না করে এড়িয়ে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। বরং আরও বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর নজরদারি ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মালদ্বীপ পর্যটন সূবর্ণজয়ন্তী বছরের লোগো চালু
নানিয়ারচর সেতু : রাঙামাটির নতুন দিগন্ত

আপনার মতামত লিখুন