বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
উদয় হাকিমের ভ্রমণ কাহিনী

আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাওয়া এত সহজ!

উদয় হাকিম, ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড) থেকে ফিরে
২৯ মে ২০১৯
আয়ারল্যান্ডের একটি গ্রাম। ছবি : উদয় হাকিম

আয়ারল্যান্ডের একটি গ্রাম। ছবি : উদয় হাকিম

আয়ারল্যান্ড যাচ্ছিলাম। দ্বিতীয়বারের মতো। ঠিক দুই বছর আগে গিয়েছিলাম প্রথম। সেবার মাত্র দুই ঘণ্টায় আয়ারল্যান্ডের ভিসা পেয়েছিলাম! এবার একটু বেশি সময় লাগলো। তিন দিন। তারপরও ইউরোপের একটি দেশের ভিসা তিন দিনে পাওয়া! সহজ-ই তো।

তবে হ্যাঁ, আয়ারল্যান্ড কিন্তু দু’টো। উত্তর আয়ারল্যান্ড হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে; রাজধানী বেলফাস্ট। এখানে যেতে যুক্তরাজ্য বা ইউকের ভিসা লাগে। দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড আলাদা। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত। ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের এক্সিট বা বের হয়ে যাওয়াকে ব্রেক্সিট বলে) হলেও এরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেই থাকছে। কিন্তু এখানে যারা যেতে চান, তাদের ভিসা নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে। ইইউ এর সেঙ্গেন ভিসা হলে চলবে না। আবার ইউকের ভিসা হলেও হবে না। শুধু দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের ভিসা লাগবে। যার রাজধানী ডাবলিন।

ভিসার ব্যাপরটি উড়োজাহাজে উঠে বলি। তার আগে এয়ারপোর্টের ব্যাপারটা সেরে নিই। শুক্রবারের সকাল। রাস্তা ফাঁকা। মাত্র পনের মিনিটে চলে গেলাম বিমানবন্দরে। টার্মিনালের সামনে বিশাল লাইন। এটি কেন? দুনিয়ার তাবৎ এয়ারপোর্টের চেক ইন (যেখানে ব্যাগ জমা দিয়ে বোর্ডিং কার্ড নেওয়া হয়। প্রত্যেক এয়ারলাইন্সের ডেস্ক রয়েছে) পর্যন্ত সবাই যেতে পারে; দর্শনার্থী অথবা সাহায্যকারী বন্ধু-আত্মীয়রা। আর ঢাকায় প্রবেশ গেট থেকেই সব বন্ধ। বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলাম ঠিক সময়েই। কিন্তু এই বিশাল লাইনের কারণে ভয় পাচ্ছিলাম, দেরি হয়ে গেলো না তো?

এরিরেটস এর কাউন্টারে গিয়ে আবার ধাক্কা খেলাম। সেখানেও লম্বা লাইন। তবে অনেকগুলো লাইন থাকায় সাহস পেলাম। সময়মতো সেটা হয়েও গেলো। আমি দেখেছি এরিরেটস এর লাইন যত বড়ই হোক সময়মতো বোর্ডিং কার্ড পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যরা এতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজটি পারেন না।

ইমিগ্রেশনে ছোট লাইনে দাঁড়ালাম। বিদেশিদের লাইনে। কোনো বিদেশি ছিলেন না বলে সুযোগটা নিলাম। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা পাসপোর্টে ভিসা দেখিয়ে দিতে বললেন। দেখালাম। কেন যাবেন আয়ারল্যান্ড? বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট খেলা দেখতে। এইবার ভদ্রলোক ধাক্কা খেলেন! এতক্ষণ তাকাননি। এবার মুখের দিকে কিছুটা অবকা হয়ে তাকালেন। খেলা দেখতে আয়ারল্যান্ড! এতো দূর! বললাম, ওয়ালটন সিরিজের টাইটেল স্পন্সর। প্রেজেন্টেশন সেরিমনিতে ওয়ালটনের প্রতিনিধি হিসেবে থাকতে হবে। তাই যাচ্ছি। ভদ্রলোক এইবার খোলস ছেঁড়ে বোরোলেন। কিছুটা যেন রিলাক্স হলেন। বললেন, মনে হয় সিরিজে বাংলাদেশ ভালো করবে। এখানে ভালো করে বিশ্বকাপে গেলে সেখানেও ভালো ফল আসবে। এর আগে ওখানে খেলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গিয়ে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছে বাংলাদেশ। গুড, ভালো। ওয়ালটনও ভালো। তারা অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে আছে। তবে হ্যাঁ, আয়ারল্যান্ডের সাথে গতকালের (৯ মে, ২০১৯) ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের একটু ক্ষতি হলো।

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ হু বলে ইমিগ্রেশন পার হলাম। পরে ভাবলাম ভদ্রলোকের নামটা অন্তত জেনে আসা উচিত ছিলো। ক্রিকেটের সব খবর রাখেন। বাংলাদেশের সব খেলাই মনে হয় দেখেন। বৃষ্টিতে আগের দিন ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো সেটাও জানেন। তাঁর বিশ্লেষণও সঠিক।

যতক্ষণে সিটি ব্যাংকের লাউঞ্জে পৌঁছলাম ততক্ষণে সময় হয়ে গেছে ফ্লাইটের। আমার নাম ধরে এ্যানাউন্স হচ্ছে। দ্রুত ক্রেডিট কার্ডের ফরেইন পার্ট ওপেন করে ভুপেন সেজে দিলাম দৌড়। বোর্ডিং লাউঞ্জে গিয়ে দেখি একেবারে পেছন দিকেই আমি। বসার সুযোগ নেই। ফ্লাইটে উঠার তাড়া।

বোর্ডিং নেওয়ার সময় কাউন্টারে লোকটাকে বলেছিলাম জানালার ধারে সিট দিতে। দেননি। পাননি বলেই হয়তো দেননি। তাই বলে একেবারে শেষে! এতো বড় এয়ারবাসের সবার শেষে সিট পাওয়া দুর্ভাগ্যই বলা চলে। জানালার ধারেও পরেনি। মাঝখানের রো থেকে সবার ডানে। বসার আগে ডান দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা সিটই খালি। যেহেতু আমি সবার শেষে উঠেছি, সেহেতু আর কোনো প্যাসেঞ্জার নেই বলেই অনুমান করছিলাম। সুতরাং এখানে বসবো না। জানালার ধারেই বসব। মাঝের রোঁতে আমার পাশে যে ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন, আর আফসোঁস করছিলেন। এটা তার মাথায় কেন খেললো না! আমি ডান পাশের সারিতে জানালার ধারে গিয়ে বসলাম। সম্ভবত ক্রুদের জন্য ওই সিটগুলো ফাঁকা রাখা হয়েছিলো। আরাম করে বসলাম। পেছনের দিকে সিট হেলিয়ে। অবশ্য আরামে কিছুটা অস্বস্তি যোগ হলো। আমার সিট হলো অ্যাটাচড বাথ! বাথরুমের পাশে!

বিশাল উড়োজাহাজ! কেমনে বাতাসে উড়ে! পড়েও যায় না। লোহা পানিতে ডুবে কিন্তু লোহার তৈরি জাহাস ভাসে কেন! লোহা বাতাসে উড়ে না, কিন্তু লোহার তৈরি জাহাজ উড়ে! নিজেকেই উত্তর দেই- এতো কিছু ভাবতে হবে না তোরে।

এবার ভিসার বিষয়টি বলি। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। সিরিজে টাইটেল ছিলো ওয়ালটন কাপ। অফিস থেকে শেষ মুহূর্তে আমাকে বলা হলো আয়ারল্যান্ড যেতে। এটি আমার জন্য ছিলো বিশাল এক সৌভাগ্যের ব্যাপার। খেলা শুরু ১২ মে থেকে। ৭ মে আমাকে বলা হলো যেতে। খোঁজ নিলাম ভিসা কীভাবে পাবো। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম মোটামুটি অসম্ভব একটা ব্যাপার! ইইউ ভিসা থাকলেও হবে না, ইউকে ভিসা থাকলেও হবে না। দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের আলাদা ভিসা লাগবে। কিন্তু সেটি পাওয়া মোটেও সহজ নয়।

ঢাকায় আয়ারল্যান্ডের কোনো দূতাবাস নেই। কনস্যুলেটও নেই। বাংলাদেশিদের আয়ারল্যান্ডের ভিসা প্রসেস হয় দিল্লি থেকে। কিন্তু ভিসা আবেদন জমা দিতে হয় কলকাতায়। সেখানে থেকে কুরিয়ারে যাবে দিল্লি। দিল্লি থেকে প্রসেস হয়ে আসবে কলকাতা। সেখান থেকে কালেক্ট করতে হবে। পরিচিতদের কাছে শুনলাম কতদিন লাগে? বললেন, দেড় মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে!

৮ তারিখে হাতের কাজ শেষ করে ৯ তারিখ সকালে রওনা হলাম দিল্লি। ১২ তারিখের ম্যাচ ধরতে হলে ১০ তারিখের মধ্যে ভিসা পেতে হবে। দিল্লি থেকে ভিসা ম্যানেজ করতে পারলে আয়ারল্যান্ড যাব। না পারলে..
চলবে...

A women entrepreneur gets new car buying Walton TV
আরব আমিরাতে সুবর্ণ প্রবাসী ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রবাসীদের মিলনমেলা

আপনার মতামত লিখুন