বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাঁও গেরাম

সুযোগ-সুবিধা বাড়লে অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার হতে পারে মুছাপুর ক্লোজার

প্রশান্ত সুভাষ চন্দ
০৫ জুলাই ২০২০

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে একটি স্লুইস গেইট পানিকে দু'ভাগ করে দিয়েছে। একদিকে স্থির হয়ে আছে মিঠা পানির বিশাল জলরাশি, আরেক দিকে জোয়ার-ভাটায় ঢেউ খেলছে বামনীয়া নদীর লবনাক্ত পানি। অন্যদিকে দিগন্তজোড়া খোলা মাঠ। যেখানে চরছে শতশত গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল। যতদূর চোখ যায় শুধু মাঠ আর মাঠ। দৃষ্টিসীমার শেষ প্রান্তে মনে হয় আকাশ নূয়ে পড়েছে মাঠে। এর মাঝ দিয়েই বামনীয়া নদী পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে পাকা রাস্তা। রাস্তা ধরে স্লুইস গেইট পর্যন্ত পৌঁছালে শীতল বাতাসে মুহূর্তেই শরীর জুড়িয়ে যাবে। তার সাথে স্লুইসের গেইট দিয়ে পানি পড়ার মন মাতানো শব্দ, বাতাসের শোঁ-শোঁ আওয়াজ এ যেন শাস্ত্রীয় সংগীতের সূর কানের কাছে বাজছে। আবার নদীর ধারের ঝাউ বনে বাতাসের ঝাপটায় যে শব্দ তৈরি হয়, তা যেন নৃত্য শিল্পীর পায়ের নূপূরের ঝংকার তুলে যাচ্ছে মুহুর্তে মুহুর্তে। মন ভালো করার জন্য আর কি চাই?

ভ্রমণ পিপাসুদের মতে সৌন্দর্যের লীলাভূমি মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এলাকাটির পূর্ব ও দক্ষিণে বামনীয়া নদী আর সন্দ্বীপ চ্যানেল। নদী তীরে বিশাল ম্যানগ্রোভ বন। 

প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটি এক অপরূপ নিসর্গ। পরিকল্পনা নিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ স্থানটি প্রকৃতিপ্রেমীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। এ এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো গেলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা যায়।

নদীর পূর্ব দিকে তাকালে দেখা যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড় গুলো। দক্ষিণে তাকালে দেখা যায়, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উরির চরের অপূর্ব সবুজের বেষ্টনি। যা দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। নদীর বুকে অথৈ জলের মাঝে ছোট-বড় মাছ ধরার নৌকাগুলো বাতাসের দোলায় যখন দুলতে থাকে তখন এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

ক্লোজারের দুই পাশের ঝাউবনে দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ অনেক রকমের পাখি। শীতকালে এলাকাটি অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে। নদীতে জেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে পাখিদেরও মাছ শিকার করতে দেখা যায়। দল বেঁধে পাখিদের ওড়াউড়ি মন কেড়ে নেয়। 

সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ক্লোজার এলাকার নদীর ভাঙ্গন রোধে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বসানো সুসজ্জিত পাথরের ব্লকে বসে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। দেখা যায় বামনীয়া নদীতে জেলেদের ইলিশ কিংবা অন্য মাছ ধরার মনোরম দৃশ্য। যে কারণে এ স্থানটিতে দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছেন ভ্রমণ পিপাষুরা। 

মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় যেমন রয়েছে নৈসর্গিক রূপ, তেমনি রয়েছে অসংখ্য মৎস্য প্রজেক্ট। এখানে মিঠা পানির মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু সামুদ্রিক মাছের ছড়াছড়ি। এছাড়া গরু-মহিষের খাটি দুধ ও দই পাওয়া যায়। 

তবে নিরাপত্তাসহ সরকারি হোটেল-মোটেলের কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দূর দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। এ স্থানটি ঘিরে সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে পর্যটনের বিকাশ ঘটছে না। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা দিলে মুছাপুর ক্লোজার এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা ।

স্থানীয়দের দাবি, মুছাপুর ক্লোজার এলাকা যদি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয় তাহলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এগিয়ে যাবে এ অঞ্চল। 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল বলেন, সরকার যদি এ এলাকাকে পর্যটন স্পট করার উদ্যোগ নেয় তাহলে এ এলাকায় প্রচুর মানুষের সমাগম হবে এবং দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে।

মুছাপুর  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম চৌধুরী শাহীন বলেন, এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুললে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। আমাদের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেছেন বলেও আমি জানি।

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ বলেন, এ এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা করার জন্য স্থানীয় সাংসদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মহোদয়ের ইচ্ছা আছে। আমরা আপাতত বনায়নের কাজ শুরু করবো। পাশাপাশি আগন্তুক পর্যটকদের কথা চিন্তা করে ছোট ছোট স্পট তৈরি করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। তাছাড়া বন বিভাগেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে করোনার ভ্যাকসিন শরীরে নিতে চান লোকমান
কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত মিন্টু হত্যা মামলার ২ আসামি গ্রেফতার

আপনার মতামত লিখুন