শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

পর্যটন মেলা ঘিরে অসন্তোষ

ডেস্ক রিপোর্ট
০৩ এপ্রিল ২০২২

বিদেশে উচ্চশিক্ষা, স্টার্ট ইয়োর বিজনেস ইন দুবাই, ফার্স্ট অ্যান্ড ইজি ভিসা (বিজনেস) সার্ভিস, টার্কি সিটিজেনশিপ অ্যান্ড পারমানেন্ট রেসিডেন্সি ফর হোল ফ্যামিলি। উপরের শিরোনাম চারটি পাওয়া গেলো চারটি পৃথক লিফলেটে। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর স্টলে। এই স্টলে মোট ছয়টি লিফলেটের চারটিই এমন। মেলাটার নাম ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার’ হওয়ায় খটকাটা আরও বেশি লাগে। বিশেষ করে খোদ টোয়াবই যার মূল আয়োজক। অনেক দর্শনার্থীকে মেলায় ভেতরে ট্রাভেল গিয়ারের স্টল খুঁজে না পেয়ে হতাশ মনে হয়েছে। 

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ৩০ মার্চ বুধবার থেকে শুরু হওয়া মেলার যবনিকা নেমেছে ১ এপ্রিল শুক্রবার রাতে। বাংলাদেশের বৃহত্তম পর‌্যটন মেলা হিসেবে দশমবারের মতো আয়োজিত এ ইভেন্টে আটটি প্যাভিলিয়নসহ ৮০টি স্টল অংশ নেয়। এগুলোর ভেতর ফিউশন ট্যুরিজম, বেস্ট বিজিনেস সেটআপ, বেস্ট হলিডেজ, স্টুডেন্ট অ্যান্ট ট্যুরিজম কেয়ারের লিফলেটসহ উল্লেখযোগ্য স্টলে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা, চাকুরি, অভিবাসন ও হজ্ব প্যাকেজ ও ম্যানপাওয়ার ব্যবসার বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছে। নামের কারণে ‘কৃষিবিদ ট্যুরজ অ্যান্ড ট্রাভেলস’কে বিশেষায়িত কোনো ট্রাভেল অপারেটর মনে হলেও তাদের স্টলে গতানুগতিক ধারার কিছু ভ্রমণ প্যাকেজের পাশাপাশি ওমরাহ ও ইতেকাফ প্যাকেজ এবং গ্লোরিয়াস ওভারসিজের সঙ্গে যৌথভাবে ‘বিদেশে জব ও স্টুডেন্ট ভিসার নিশ্চয়তা’ শীর্ষক লিফলেট বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। এ-ওয়ান ট্যুরিজমের স্টলে ‘তুরস্ক রেসিডেন্সি হওয়ার সুযোগ এখনই’ এবং ‘বিনামূল্যে মালদ্বীপ, দার্জিলিং ও সুন্দরবন ভ্রমণের সূবর্ণ সুযোগ’ নামে দুটি বিশেষ লিফলেট প্রদর্শিত হলেও কোনোটারই ব্যাখ্যা প্রকাশ্য ছিলো না।

আবার ‘বাংলাদেশের একমাত্র মিষ্টি পানির সৈকত’ লেখা ব্যানার দেখে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে যেতেই জানা গেলো, চাঁদপুরের মেঘনা তীরকে সৈকত হিসেবে দাবি করছে মোহনপুর পর‌্যটন। স্টলের কর্মীদের দাবি, ‘শুধু সাগরের তীর কেনো হবে, নদীর তীরও সৈকত।’ কিন্তু, তাহলে কি আর কোনো নদীতে মিঠা পানি নেই- এমন প্রশ্নের উত্তরে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তারা।

লতিফ ট্যুরিজমের স্টলে দেখা গেলো, সিলেট নিয়ে বেশ কিছু কমপ্লিট প্যাকেজ। প্রতিষ্ঠানটির কোফাউন্ডার ও সিইও ফাহিম আর চৌধুরী কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থী সামলাচ্ছেন। স্টলটিকে গোটা সিলেট এবং সিলেট থেকে দেশের যে কোনো স্থানে ভ্রমণের ওয়ান স্টপ সার্ভিস বলে মনে হয়। এ কারণে তাদের হজ্ব এজেন্সির লিফলেট খুব একটা চোখে লাগে না। ম্যানপাওয়ার এর বিজ্ঞাপনও দৃষ্টিকটূ ঠেকে না।

প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকা মেলায় প্রথম দুদিন দর্শনার্থী ছিলো কম। শেষ দিনে তুলনামূলক বেড়েছে। যদিও সুলভ মূল্যে গুড়ের সরবত, পাটিসাপটা, কফি, খিচুড়ির কারণে বাংলাদেশ পর‌্যটন কর্পোরেশনের স্টল সবচেয়ে বেশি জমজমাট ছিলো, কিন্তু মেলা ঘুরে দর্শনার্থী, ট্যুর অপারেটররে খুশি মনে হয়নি। মেলার উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ আগামী বছর পাঁচ কোটি অভ্যন্তরীণ ট্যুরিস্ট তৈরির যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তা পূরণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ট্যুর অপারেটরদের ভেতরেই।

অনেক দর্শনার্থীকে মেলায় ভেতরে ট্রাভেল গিয়ারের স্টল খুঁজে না পেয়ে হতাশ মনে হয়েছে। ইউএস বাংলার মতো আরও এয়ারলাইন্সের স্টল থাকতে পারতো মেলায়। থাকতে পারতো পরিবহন কোম্পানির স্টল। বিদেশি স্টলের অনুপস্থিতি আরও বেশি দৃষ্টিকটূ ঠেকেছে। টোয়াব আয়োজিত যে মেলার সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ- সে মেলা আরও জমজমাট হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করেন অনেকে। কেউবা প্রশ্ন তুলেছেন আয়োজকদের আত্মম্ভরিতা নিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়োজকদেরই একজন আক্ষেপ করে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞাপনে কর্মকাণ্ডের উপস্থিতি থাকা উচিত। কিন্তু মেলার ব্যানারে টোয়াব প্রধানে ছবি বড় করে দেওয়া। এভাবে প্রাতিষ্ঠানিকতা প্রতিষ্ঠিত হয় না।

মেলা নিয়ে হতাশ বেঙ্গল ট্যুরসের সত্ত্বাধিকারী মাসুদ হোসেন বলেন, যে দেশে দেড়/দুকোটি অভ্যন্তরীণ ট্যুরিস্ট সে দেশে এমন সাদামাটা আয়োজন আশা করা যায় না। করোনার কারণে তিন বছর পর এ মেলা। যে মেলা আগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন, সে মেলায় এবার বিনিয়োগও উঠবে না।

মেলা দেখতে আসা বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন সভাপতি আশরাফুজ্জ্বামান উজ্জ্বল বলেন, একটা মেলা মানে পুরো ইন্ডাস্ট্রির অংশগ্রহণ। কিন্তু এবার ব্যবসায়িক উপস্থিতি দুর্বল মনে হয়েছে। সব ট্যুরিজম ফেয়ারেই বই এর প্রদর্শনী থাকা উচিত।

তবে এসব সমালোচনাকে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ হিসেবেই উড়িয়ে দিলেন টোয়াব প্রেসিডেন্ট রাফিউজ্জামান বলেন, কে কি বললো, তা নিয়ে কিছু এসে যায় না। প্যানডেমিকের পর আমরা এই আয়োজন করতে পেরেছি। ভালো সাড়া জাগিয়েছি। ট্যুরিজমে জাগরণও শুরু হবে।

ওয়ালটন কারখানায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
পর্যটকদের জন্য দ্বার উন্মোচন করল মালয়েশিয়া

আপনার মতামত লিখুন