শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
উদয় হাকিমের ভ্রমণ কাহিনী

আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন

উদয় হাকিম, ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড) থেকে
১৯ মে ২০১৯

সেভেন। লাকি সেভেন। সাত সংখ্যাটি আসলেই পয়মন্ত। সপ্তমবার ফাইনালে গিয়ে সুখের সপ্তমে পৌঁছালো বাংলাদেশ। আগের ছয়বার না হলেও সপ্তমবারে স্বপ্নের ট্রফি নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় কোনো সিরিজের শিরোপা জিতলো ক্রিকেটের নতুন পরাশক্তি বাংলাদেশ।

আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে ৫ মে শুরু হয়েছিল ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজ। ১৭ মে শেষ হলো বাংলাদেশের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে খেলেছে বাংলাদেশ। সবদিক থেকেই সত্যিকার বড় দলের মতোই খেলেছেন টাইগাররা। দুবার ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একই সিরিজে গুনে গুনে তিন তিনবার হারালো বাংলাদেশ। এমন বাংলাদেশকে ক্রিকেটের পরাশক্তি বলাই চলে!

পুরো দেশবাসীর সঙ্গে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরাও শুক্রবার কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন- কাপ জিতুক বাংলাদেশ। ফাইনালে বৃষ্টির ছোবল থাকলেও শেষ পর্যন্ত খেলা হয়েছে এবং তাতে বীরের মতোই জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো মাশরাফির হাতে উঠলো ত্রিদেশীয় কোনো সিরিজের শিরোপা।

খেলা শেষে আয়ারল্যান্ড প্রবাসীদের মধ্যে দেখা গেছে আনন্দের বন্যা। অনেকে ইফতারের পর বন্ধুদের মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছেন।

তবে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তাদের মতে, বহুল কাঙ্ক্ষিত জয়টা আসলো আয়ারল্যান্ডের মাঠ থেকেই।

প্রায় ৪১ বছর ধরে আয়ারল্যান্ডে আছেন তারিক সালাউদ্দিন। ডাবলিনে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে বেশ পরিচিত মুখ। ব্যস্ত এই মানুষটি এবার সিরিজের প্রায় সবগুলো খেলাই দেখেছেন মাঠে বসে। তিনি বললেন, আয়ারল্যান্ডের মাটিতে বসে বাংলাদেশের বিজয় দেখা আমাদের জন্য বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। এটি বিশাল পাওয়া।

ঐতিহাসিক এই সৌভাগ্য উপভোগের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ দল, আয়োজক এবং স্পন্সর ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত পারফরমেন্সে মুগ্ধ বিপুল খন্দকার। তিনি ডাবলিনে আছেন দুই যুগ ধরে। ফাইনালে জেতার পর ঢুকে গিয়েছিলেন মাঠে। সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক। তিনি বললেন, ‘অনেক ভাগ্যবান আমি। সরাসরি মাঠে বসে এরকম একটা বিজয় দেখতে পারলাম। সিরিজের সবগুলো খেলাই দেখেছি। বাংলাদেশ দলের এমন ধারাবাহিক ভালো খেলা আগে কখনো দেখিনি। অভিজ্ঞ এবং বড় দলের মতোই খেলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে এমন একটা সাফল্যের খুব দরকার ছিল। আশা করছি, বিশ্বকাপেও ভালো করবে টাইগার বাহিনী।’

তুলামোর থেকে পরিবারসহ এসেছিলেন গৃহবধূ সুমি। তিনি জানালেন, খুব ভালো লাগছে। এমন বিজয় দেখে চোখ জুড়িয়ে গেছে তার। রফিক খান বাঘের একটি প্রতিকৃতি নিয়ে এসেছিলেন কর্ক থেকে। অনুভূতি জানালেন, অসম্ভব ভালো লাগছে। শাহরিয়ার এবং শম্পা। স্বামী-স্ত্রী। খেলা শেষ হলেও মাঠেই ছিলেন। বললেন, আবার কবে এমন সৌভাগ্যের দিন আসবে জানি না। তাই যতবেশি সম্ভব দেখছি সবকিছু।

জয় ইসলাম, নজরুল ইসলাম সাইফুল, হুমায়ুন খালিদ, শামসুজ্জামান, মনিরুল ইসলাম, চঞ্চল- এসেছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সবার এক কথা- বাংলাদেশ দলের এমন পারফরমেন্সে তারা গর্বিত।

বাংলাদেশ দলের পরম ভক্ত মোহাম্মদ শাহীন। আগের দুদিন একাই মাঠ মাতিয়ে রেখেছিলেন। ফাইনালে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন কিছুটা। ঝাঁকড়া চুলের এই ‘টিম বাংলাদেশ’ ফ্যান খুবই উচ্ছ্বসিত এমন বিজয় দেখে। বলছিলেন, কষ্ট সার্থক হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে এসে। এবার পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারব না। কিন্তু ঈদের আনন্দ এরইমধ্যে পেয়ে গেলাম। ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারব। অভিনন্দন বাংলাদেশ।

মাশরাফির হাতে ট্রফি তুলে দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি: উদয় হাকিম
আয়ারল্যান্ডে মাঠ জুড়ে বাংলাদেশ!

আপনার মতামত লিখুন