মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
উদয় হাকিমের ভ্রমণ কাহিনী

আয়ারল্যান্ডে মাঠ জুড়ে বাংলাদেশ!

উদয় হাকিম, ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড) থেকে
২০ মে ২০১৯
আয়ারল্যান্ডের মাঠে ওয়ালটন। সাইট স্ক্রিন এবং পেরিমিটার বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের ওয়ালটনের লোগো

আয়ারল্যান্ডের মাঠে ওয়ালটন। সাইট স্ক্রিন এবং পেরিমিটার বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের ওয়ালটনের লোগো

বাংলাদেশিদের কাছে ইউরোপ-আমেরিকা মানে স্বপ্ন; স্বপ্নের দেশ। সে সব দেশ থেকে বাংলাদেশের কোনো সাফল্যের খবর পেলে দেশের মানুষ উদ্বেলিত হন। দেশকে নিয়ে গর্ববোধ করেন; উচ্ছ্বসিত হন। ডাবলিনে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারপরনাই খুশি। তাদের কথা- ইউরোপ জানলো, বাংলাদেশের সাফল্যের উপাখ্যান।

তাদের দৃষ্টিতে- ইউরোপের মাটিতে খেলা হলেও সিরিজ জুড়ে পুরো মাঠ হয়ে উঠেছিলো এক টুকরো বাংলাদেশ। দর্শকদের বেশিরভাগ ছিলেন বাংলাদেশি। এমনকি আয়ারল্যান্ডের দর্শকরাও মাঠে সাপোর্ট করেছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া মাঠে যত স্পন্সর ছিলো- সবই বাংলাদেশের!

আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী তারিক সালাউদ্দিন। স্ত্রী সন্তানসহ ফাইনাল ম্যাচ দেখছিলেন। ফাইনালে জেতার পর পরই জানতে চেয়েছিলাম তাঁর প্রতিক্রিয়া। দলের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করার পরই বললেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। ‘একটু ভাবুন খেলাটা হচ্ছে ইউরোপের মাটিতে। এরা বিশ্বকে ডমিনেট করে। ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের প্রাধান্য সর্বত্র। অথচ এখানে টাইটেল স্পন্সর বাংলাদেশের ওয়ালটন। মাঠে যতগুলো স্পন্সর- সবই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান।’

ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশি এই ব্র্যান্ডটি এতো দ্রুত উঠে আসছে যা সবার জন্য অনুকরণীয়। এটা একটা বিশাল ব্যাপার।’ ক্রিকেটের এই ঐতিহাসিক বিজয়ে এরকম একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে ওয়ালটনের সহযোগিতাকে তিনি সাধুবাদ জানান।

তিনি বললেন, ‘টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিং নামে বাংলাদেশের একটি কোম্পানি চার বছরের জন্য আয়ারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল গ্রাউন্ডস রাইটস কিনে নিয়েছে। তার মানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বকে ডমিনেট করতে তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্ম।’

উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট থেকে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন। তার ব্যাখ্যা অন্যরকম। ‘ছোটবেলা থেকেই দেখছিলাম এরকম আন্তর্জাতিক ইভেন্টে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডগুলোর লোগো দেখা যায়। এ ধরনের ইভেন্টে স্পন্সর করতে অনেক টাকা লাগে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল এসব ইভেন্টে প্রধান স্পন্সর হবে ভাবতে পারতাম না। ওয়ালটন সেটা করে দেখালো। তার মানে ওয়ালটন এখন বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ওয়ালটন ট্রাই সিরিজ নামের ওই ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সেভেন রিং সিমেন্ট, গাজী টায়ার, ইস্পাহানি এরকম বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্পন্সর ছিলো। সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশ নেয় স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড এবং দু‘বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে ২০১৭ সালে ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও টাইটেল স্পন্সর হয়েছিলো ওয়ালটন। সেবছর বাংলাদেশ এবং আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খেলেছিলো নিউজিল্যান্ড।

টাঙ্গাইলের যুবক মাহাবুব বললেন, ‘ওয়ালটনের জন্য গর্ব হচ্ছে। আইরিশ বন্ধুদের আমরা বলেছি, দেখো আমাদের দেশের ব্র্যান্ড তোমাদের দেশে এসে স্পন্সর করছে। ওয়ালটন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বকাপেও আমরা ওয়ালটনতে দেখতে চাই।’

আয়াতুল্লাহ মিলকি এসেছিলেন কাউন্টি ক্লেয়ার থেকে। দেশীয় ব্র্যান্ড বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করছে- বিষয়টি তার কাছে দারুণ লাগছে। ইসরাফিল দেওয়ান এসেছিলেন গলওয়ে থেকে। দশ বছর ধরে তিনি আয়ারল্যান্ডে আছেন। বললেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এসে ইউরোপের হার্ট এ প্রধান স্পন্সর ওয়ালটন। ভাবাই যায় না!’

২৬ বছরের যুবক সজিব। জানালেন, ওয়ালটন এখানে প্রতিটি বাংলাদেশিকে প্রতিনিধিত্ব করছে। ওয়ালটনের জন্য শুভ কামনা। ক্রিকেট দল এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য শুভ কামনা।

রেডিও স্পাইস এফএম ৯৬.৪ এর স্পন্সরে আয়ারল্যান্ডে এসেছিলেন মোহাম্মদ শাহীন। দেশ-বিদেশে যেখানেই বাংলদেশ দলের খেলা সেখানেই দেখা যায় তাঁকে। তার অনুভূতি অন্যরকমের। ‘বিদেশে খেলা দেখতে যাই আমরা অনেক কষ্ট করে, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। শত কষ্টের মধ্যেও যখন দেখি বাংলাদেশের ওয়ালটন আছে মাঠে তখন অনেক সাহস পাই। মনে হয় আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড যেখানেই গিয়েছি দেখেছি ওয়ালটন আছে। খেলোয়াড়েরা যেমন মাঠে খেলেন, তেমনি মাঠের বাইরেও আমরা সবার চোখে চোখ রেখে বলতে পারি বাংলাদেশ অদম্য!’

আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন
বিশ্বকাপ জিতবে বাংলাদেশ!

আপনার মতামত লিখুন